ঢাকাস্থ ফেনীবাসীর হুঁশিয়ারি : বন্যা নিয়ন্ত্রণে রোডম্যাপ না হলে অবরোধ-অবস্থানসহ কঠোর কর্মসূচি

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১৭:২৩

ফেনীসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভারতীয় পানি আগ্রাসনের ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে ঢাকাস্থ ফেনীবাসী। দাবি মানা না হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে অবস্থানসহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১২ জুলাই) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। ফেনী জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন ব্যবসায়ী ও ছাগলনাইয়া ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিদারুল আলম মজুমদার এবং সঞ্চালনায় ছিলেন ফেনী কমিউনিটির মুখপাত্র বুরহান উদ্দিন ফয়সল।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের সাধারণ সম্পাদক ড. নিজামুদ্দিন, হাবের পরিচালক ও দাগনভুঁইয়া উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজিম উদ্দিন পাটওয়ারি, সিনিয়র সাংবাদিক শাহ মহিউদ্দিন, ফেনী ফোরামের সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, মনিপুর স্কুলের শিক্ষকদ্বয় রিয়াজুদ্দিন ও দেলোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন তালুকদার, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ নাজমুল হক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মনির উদ্দিন মনি, পরশুরাম ফোরামের সেক্রেটারি মহিউদ্দিন পলাশ, ফেনী সদর এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন রুমেল, শ্রমিক দল নেতা আব্দুর রহিম, ফেনী এলিট ক্লাবের সভাপতি ফয়জুল্লাহ নোমানি, ফেনী সোসাইটি উত্তরার সহ-সাধারণ সম্পাদক এমরানুল হক, সোনালী ব্যাংকের সিবিএ নেতা ইউসুফ আলী, কর্মসংস্থান ব্যাংকের সিবিএ নেতা নাসিরুদ্দিনসহ আরও অনেকে।
সরকারি ব্যর্থতার অভিযোগ ও দাবি
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারা কেবল আশ্বাস দেন, কিন্তু বাস্তবায়নে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। তিনি বলেন, ‘ফেনীবাসী ত্রাণ চায় না, স্থায়ী সমাধান চায়। ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় অবস্থান নিতে হবে।’
জেএসডি নেতা শহীদ উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘মিথ্যা আশ্বাস নয়, আমরা চাই কার্যকর বাঁধ ও সুরক্ষা ব্যবস্থা যাতে প্রতিবছর বন্যায় ভেসে না যাই।’
সভাপতির বক্তব্যে দিদারুল আলম মজুমদার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চরম ব্যর্থতা ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে বলেন, ‘বাঁধ মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় হয়েছে, তবু ছয় মাস যেতে না যেতেই সেগুলো আবার ধসে পড়েছে। দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
মানববন্ধনে উত্থাপিত ৭ দফা দাবি
১. উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রভাবে যেন বারবার বন্যা না হয়, তার জন্য স্থায়ী ও কার্যকর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
২. বল্লামুখা বাঁধ ও মুছাপুর ক্লোজার অবিলম্বে পুননির্মাণ।
৩. জলাবদ্ধতা নিরসনে জলাধার উদ্ধার, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, নদী খনন ও অনিয়ন্ত্রিত স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ।
৪. ১০০০ কোটি টাকার পুনর্বাসন প্রকল্পের তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ।
৫. বন্যাপ্রবণ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তিনতলা ভবন নির্মাণ করে সেগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তর।
৬. পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি।
৭. ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ; ফেনী নদীর পানি হস্তান্তর বন্ধ।
ঢাকাস্থ ফেনীবাসী জানিয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকার যদি তাদের দাবির বিষয়ে কোনো ঘোষণা না দেয়, তাহলে তারা ঢাকায় বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে।
এমডিএ/এইচকে