Logo

সারাদেশ

পানি নামছে, ঘরে ফিরেও নতুন দুর্ভোগে ফেনীবাসী

Icon

ফেনী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৬

পানি নামছে, ঘরে ফিরেও নতুন দুর্ভোগে ফেনীবাসী

ছবি : সংগৃহীত

ফেনীতে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও ঘরে ফিরে আরেক দফা সংকটে পড়েছেন দুর্গত মানুষেরা। কর্দমাক্ত ঘরবাড়ি, নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার, ভাঙাচোরা আসবাবপত্র—সব মিলিয়ে বাঁচার লড়াইয়ে নতুন করে নেমেছেন তারা।

গত সোমবার (৮ জুলাই) থেকে টানা বৃষ্টি ও ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এতে ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার বহু এলাকা প্লাবিত হয়।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বন্যায় জেলায় অন্তত দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। এ ছাড়া ফসল, সড়ক, সেতু, স্কুল, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনাও ক্ষতির শিকার হয়েছে।

ফুলগাজী বাজারের শ্রীপুর সড়কে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত ১৫টি দোকান। দোকান হারিয়ে হতাশ ব্যবসায়ীরা এখনো নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে জীবিকার পথ খুঁজছেন।

ব্যবসায়ী মো. আবদুল গফুর বলেন, ‘একদিনেই দোকান চলে গেল নদীতে। এত বছর ধরে এখানে বসে ব্যবসা করতাম। এখন হাওয়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। সংসারের একমাত্র আয়ের উৎসটাও আর নেই।’

ঘরে ফিরেও ঢোকা যাচ্ছে না
ফলগাজী উপজলোর গজারিয়া গ্রামের গৃহবধূ শাহিদা আক্তার বলেন, ‘পানি নেমেছে, কিন্তু ঘরে ঢুকতে পারছি না। মাটিতে কাদা, নষ্ট খাবারের গন্ধে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে তেমন কিছুই নেই।’

১৪টি স্থানে বাঁধ ভেঙেছে
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন জানান, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধে অন্তত ১৪টি স্থানে ভাঙন হয়েছে। এতে ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। তিনি বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছি। তবে টেকসই বাঁধ ও নদী খনন ছাড়া এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।’

ত্রাণ নয়, চাই স্থায়ী সমাধান
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর মানুষ বলছেন, তারা এখন আর ত্রাণ চান না, চান স্থায়ী সমাধান। ফুলগাজীর সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল রসুল গোলাপ বলেন, ‘প্রতিবছর ডুবে যাই। মানুষ এখন ত্রাণ না, টেকসই বেড়িবাঁধ চায়। নদী খনন, বাঁধের মেরামত আর যথাযথ তদারকি না থাকলে এই দুর্ভোগ চলতেই থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক ই আজম শনিবার দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ বলছে ত্রাণ নয়, বাঁধ দিন। আমি বলছি—দুটোরই দরকার। এখন মানুষকে বাঁচাতে ত্রাণ দিতে হবে, আর ভবিষ্যতের জন্য দরকার টেকসই বাঁধ।’

এদিকে, বন্যার পানি কমলেও অনেক এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরেনি। কেউ কেউ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। ফুলগাজী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারিয়া ইসলাম বলেন, ‘পানি নেমে গেলেও অনেক ঘর এখনো বসবাসের উপযোগী হয়নি। বিদ্যুৎ সংযোগও সবখানে চালু হয়নি। বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি।’

পরশুরাম উপজেলার ইউএনও আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণ চলছে, তবে চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে ধাপে ধাপে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

  • ডিআর/এটিআর

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বন্যা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর