কিশোরগঞ্জের নিকলীতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলো আছিয়া আক্তার

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ২১:০৩

ছবি : প্রতিনিধি
প্রচণ্ড দারিদ্র্য, বাবার শূন্যতা, সংসারের দায়িত্ব—সব বাধা পেরিয়ে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছেন কিশোরগঞ্জের নিকলীর আছিয়া আক্তার। ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষায় উপজেলা পর্যায়ে একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি।
উপজেলার ধারীশ্বর গ্রামের মৃত আক্কাস আলীর বড় মেয়ে আছিয়া। মাত্র ৮ বছর বয়সে বাবাকে হারায় আছিয়া। বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়েকে পড়ালেখা করিয়ে প্রতিষ্ঠিত করবেন। পরবর্তীতে সেই স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসেন আছিয়ার মা। অতি দরিদ্র এই নারী দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে মানুষ করতে শহরে দিনমজুরি শুরু করেন।
পরে বয়স ১০ পেরোতেই মামা এরশাদ আলীর মাধ্যমে নিকলীর কুর্শা গ্রামের ইবনে তাইমিয়া আইডিয়াল দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয় আছিয়া। মা শহরে, আর সে গ্রামে—ঘর ও পড়াশোনা একসঙ্গে সামলাতে হয় তাকে। অভাব আর অনিশ্চয়তা সঙ্গী করেই এগিয়েছে তার পথচলা।
তবে আছিয়ার মেধা, অধ্যবসায় ও প্রতিজ্ঞার সঙ্গে ছিল তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নিবেদিত সহযোগিতা। এছাড়া মাদ্রাসার শিক্ষকদের যত্নশীল দিকনির্দেশনা, মানবিক শিক্ষা পরিবেশ এবং ‘হাসেনে ইন্টারন্যাশনাল’ ও ‘আলতাব নিসা ফাউন্ডেশন’-এর নীরব আর্থিক সহায়তা তাকে এগিয়ে যেতে সাহস জুগিয়েছে।
এ অভাবনীয় ফলাফলের পর আছিয়া বলেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি এত কষ্টের মাঝেও জিপিএ-৫ পাবো। আমার মাদ্রাসা, শিক্ষক, মামা এবং যারা আমাকে সাহস দিয়েছেন—সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি বড় হয়ে মানুষের উপকারে আসতে চাই।’
মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. দেওয়ান আলী বলেন, ‘আমরা শুধু ভালো রেজাল্ট নয়, নৈতিকতা, মানবিকতা ও বাস্তব জীবনের জন্য প্রস্তুত মানুষ গড়ার চেষ্টায় আছি। আছিয়ার সাফল্য আমাদের পথচলার স্বীকৃতি।’
আছিয়ার এই অর্জনে খুশি হয়ে তার উচ্চশিক্ষা, ছোট বোন ও ভাইয়ের লেখাপড়া এবং তার মায়ের জন্য স্থায়ী মাসিক সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে আলতাব নিসা ফাউন্ডেশন।
আব্দুর রউফ ভুঁইয়া/এএ