বন্ধুদের কাঁধে ভর করে প্রতিবন্ধী মাহফুজের জিপিএ-৫ অর্জন

খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ২১:২৪

ছবি : প্রতিবেদক
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন খুলনার কয়রার শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মাহফুজ। দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারেন না তিনি। ডান হাতেও নেই পূর্ণ শক্তি। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও দমে যাননি মাহফুজ। ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন—ইচ্ছা, পরিশ্রম ও সহযোগিতা থাকলে কোনো সীমাবদ্ধতাই সাফল্যের পথে বাধা হতে পারে না।
উপকূলীয় কয়রা উপজেলার প্রত্যন্ত উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের দিঘীরপাড় গ্রামের বাসিন্দা মাহফুজ। পিতা মো. মুনসুর আলী একজন মাদ্রাসা শিক্ষক, মা সাজেদা বেগম গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে কনিষ্ঠ মাহফুজ ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন একজন মানবিক চিকিৎসক হওয়ার।
শৈশবে থেকেই মাহফুজ ছিল মেধার ঝলক—প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে বৃত্তি পান। পরে ভর্তি হন বেদকাশী কলেজিয়েট স্কুলে, সেখান থেকেই এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
প্রতিদিন মায়ের কোলে চড়ে কিংবা পরে মামার সহায়তায় সাইকেলে চড়ে স্কুলে যেতেন। সাইকেল থেকে উঠতে না পারায় স্কুল গেটে পৌঁছানোর পর বন্ধুরাই তাকে কাঁধে করে নিয়ে যেত ক্লাসরুমে। এমনকি টয়লেটে যাওয়া, পরীক্ষা হলে পৌঁছানো সবকিছুতেই পাশে ছিলেন শুভ, মুশফিকসহ অন্যান্য বন্ধুরা।
মাহফুজ বলেন, ‘আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী, কিন্তু কেউ আমাকে তেমনটি অনুভব করতে দেয়নি। মা, শিক্ষক, বন্ধুদের সহায়তা না থাকলে এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না। আমি চাই চিকিৎসক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। অন্য প্রতিবন্ধীদের বলবো—শারীরিক সীমাবদ্ধতা অজুহাত নয়, চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ মেধা দিয়েছেন, তা কাজে লাগালেই সাফল্য আসবে ইনশাআল্লাহ।’
বন্ধু মুশফিক বলেন, ‘মাহফুজ শুধু আমাদের বন্ধু নয়, আমাদের অনুপ্রেরণা। ওর স্বপ্ন মানে আমাদের স্বপ্ন। কোথাও গেলে কাঁধে করে নিয়ে যেতাম, কখনো বিরক্ত হইনি।’
মা সাজেদা বেগম বলেন, ‘অনেক চিকিৎসা করিয়েছি, কিন্তু সে হাঁটতে শেখেনি। কিন্তু এত কষ্টের মাঝেও ছেলেটা আজ যেখানে পৌঁছেছে, তাতে আল্লাহর দরবারে লাখো শুকরিয়া। সবার কাছে দোয়া চাই—সে যেন একজন ভালো ও মানবিক চিকিৎসক হতে পারে।’
স্কুলের অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘মাহফুজ নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকত। তার মনোযোগ, মেধা ও শৃঙ্খলা ছিল অসাধারণ। সে বিনয়ী, দায়িত্বশীল এবং আত্মপ্রত্যয়ী একজন ছাত্র। তার এ সাফল্য আমাদের জন্য গর্বের।’
আব্দুল্লাহ আল মাহফুজের এ জয় শুধু তার একার নয়, এটি এক পরিবারের, কিছু নিবেদিত বন্ধু ও একটি মানবিক সমাজের সম্মিলিত অর্জন। তার জীবন ও লড়াই অন্যসব প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য এক উজ্জ্বল অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তরিকুল ইসলাম/এএ