Logo

সারাদেশ

প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী আজ

অপরাধীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানাল আবু সাঈদের পরিবার

Icon

রংপুর ব্যুরো

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৫

অপরাধীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানাল আবু সাঈদের পরিবার

পুলিশের গুলির সামনে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ানো আবু সাঈদ | ছবি : সংগৃৃহীত

পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের স্মরণে আজ পালন হচ্ছে ‘জুলাই শহীদ দিবস’। ২০২৪ সালের এই দিনে রংপুরে ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। দিনটিকে সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক ও স্মৃতিচারণার দিন হিসেবে ঘোষণা করেছে।

সেই দিনের ঘটনাগুলো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের সদস্যদের ভাষ্যে এখনো তাজা হয়ে আছে। আন্দোলনের সহযোদ্ধারা বলছেন, আবু সাঈদের বুক পেতে গুলি সহ্য করার দৃশ্য গোটা জাতিকে নাড়া দিয়েছিল। সেই দৃশ্য দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এক প্রবল তরঙ্গে রূপ নেয় গণআন্দোলনে, যার ফলে শেষ পর্যন্ত পতন ঘটে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের।

এদিকে আবু সাঈদের পরিবারের ভাষ্য, হত্যাকাণ্ডের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ন্যায় বিচার পাননি তারা। তাই অপরাধীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন নিহতের বাবা-মা।

যেভাবে ঘটেছিল ঘটনা
২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটাবিরোধী আন্দোলন রূপ নেয় বৈষম্যবিরোধী গণআন্দোলনে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও এই আন্দোলনের বিশেষ একটি কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ তখন ছিলেন এর অগ্রভাগে।

প্রথম দিকে হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী ছোট ছোট মিছিল করতেন। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে নগরীর বিভিন্ন কলেজ, স্কুল, এমনকি সাধারণ মানুষের মাঝেও। তবে এই আন্দোলনে বাধা দিতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সহযোগী সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তারা মিছিলকারীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায়।

১৬ জুলাই সকালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের একটি মিছিল রওনা হয় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। প্রেসক্লাব পার হওয়ার পর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের কাছে পৌঁছালে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের নেতৃত্বে হামলা শুরু হয়।

এ সময় পুলিশও মিছিলকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। বহু শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। তখনই আবু সাঈদ পুলিশের সামনে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘গুলি করলে কর, আমি বুক পেতে দিয়েছি।’ এরপরই পুলিশের গুলিতে তিনি লুটিয়ে পড়েন।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শহীদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধা শাহারিয়ার সোহাগ বলেন, ওই সময় আমিও গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম। আবু সাঈদের সাহস আমাদের এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছিল।

বেরোবির শিক্ষার্থী জেবিন বলেন, আমি তার কয়েক গজ দূরে ছিলাম। সে যে সাহস দেখিয়েছে, তা ইতিহাসে বিরল। তার মৃত্যু শেখ হাসিনার শাসনের পতন ঘটিয়েছে।

আরেক শিক্ষার্থী রাজু বাশফোর জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমরা আবু সাঈদকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলি ও রাবার বুলেটে তার সারা শরীর ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল।

হাসপাতালে ছুটে যাওয়া বাসদ (মার্কসবাদী) রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরেফিন টিটু জানান, পুলিশ সেদিন নির্দয়ভাবে গুলি চালায় এবং নিহত সাঈদের লাশ নিয়েও তৎপরতা চালায়। বেরোবির বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, এটা ছিল ঠান্ডা মাথায় হত্যা—কোল্ড ব্লাডেড মার্ডার। আমরা তার লাশ গ্রামের বাড়ি বাবনপুরে নিয়ে যাই।

পরিবারের চোখে শোক, মনে ক্ষোভ
পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে শহীদ আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মা মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ, এক বছর হতে চললো। এখনও অনেক খুনি চাকরি করছে। অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না। আমার ছেলেকে হত্যার পর লাশ দাফন করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তড়িঘড়ি করে দাফন করার চেষ্টা করেছে স্থানীয় আওয়ামী নেতাকর্মীসহ পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন। এদের কোনও শাস্তি এবং তাদের গ্রেপ্তারও করা হলো না।

আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, শুনলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলা আমলে নিয়ে ২৬ জনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। কিন্তু এক বছরেও তো মামলার কোনও অগ্রগতি নেই। সুষ্ঠু বিচার নিয়ে আমার এখনও শঙ্কায়। আমি ন্যায় বিচার চাই। 

বড় ভাই রমজান আলী বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যার ন্যায্য ও সুষ্ঠু বিচার চাই। সেই সঙ্গে কোনো নিরপরাধ মানুষ যাতে সাজা না পায় সেটাও দেখতে হবে।

বেরোবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে শহীদ আবু সাঈদের হত্যাকারী, ইন্ধনদাতা, অর্থের জোগানদাতাসহ সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। 

এদিকে শহীদ আবু সাঈদ দিবস উপলক্ষে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপী নানান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে কবর জিয়ারত, র‌্যালি, আলোচনা সভাসহ নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদিকে আবু সাঈদের পরিবারের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী মিলাদ, দোয়া মাহফিল, দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ, আলোচনাসহ নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর