
মানিকগঞ্জ শহরের যে হাটে বিক্রি হয় মানুষ! ছবি : বাংলাদেশের খবর
বাজারহাট, নৌকা হাট, গরু-ছাগলের হাট—এমন অনেক হাটের নাম আমরা সবাই জানি। তবে মানুষ বিক্রির হাটের কথা হয়তো খুব কমই শুনেছেন।
মানিকগঞ্জ শহরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নবীন সিনেমা হলের পাশেই রয়েছে এমনই এক ব্যতিক্রমী হাট। এখানে প্রতিদিন চুক্তিভিত্তিক কাজের জন্য মানুষ ‘বিক্রি’ হয় বিভিন্ন দামে।
বরিশাল, পটুয়াখালী, গাইবান্ধা ও রংপুরসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে কাজের সন্ধানে এখানে আসেন বহু শ্রমজীবী মানুষ।
রোজ চুক্তিভিত্তিক কাজ অনুযায়ী প্রকারভেদে একজন শ্রমিক ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত নেন। চাইলে ১০ থেকে ১৫ দিনের চুক্তিতেও তাদের নেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে আগেভাগেই খাবার-দাবারসহ অন্যান্য সুবিধা নিয়ে দরদাম করে নিতে হয়।
তবে সমস্যা হয় বর্ষাকালে। এ সময় কাজের পরিমাণ কমে যায়। অধিকাংশ সময়ই শ্রমিকদের বসে থাকতে হয় খরিদ্দারের অপেক্ষায়। অনেক সময় কোনো কাজ না পেয়ে উপার্জন ছাড়াই বাড়ি ফিরতে হয় তাদের।
এ শ্রমিকদের কাজের ক্ষেত্রও নানা রকম। ধান কাটা, ধান রোপণ, বাড়িঘরের নির্মাণ, মাটি কাটা, ভারী মালামাল বহন ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন।
গাইবান্ধা থেকে আসা সবুজ মিয়া বলেন, বন্যার সময় কাজকাম তেমন থাকে না। তখন একটু কষ্ট হয় বটে। তবে তখন বাড়িতে নানান কাজ করে দিন পার করি।
পটুয়াখালী থেকে আসা সুশীল নামের একজন শ্রমিক জানান, বৃষ্টির দিনে ২-৩ দিন অনেক কষ্ট করে এখানে থাকতে হয়েছে। আজ একজন মাটি ফেলিয়ে বাড়ি বানাবেন। ১১০০ টাকা রোজ চুক্তিতে ১৫ দিনের জন্য কাজে যাচ্ছি। বাড়ি গিয়ে মেয়েকে বিরিয়ানি খাওয়াব।
ফরহাদ নামের এক কৃষক বলেন, আমাদের বাড়িতে মাটি ও বালি দিয়ে ভিটি উঁচু করব। তাই লোক নিতে এসেছি। তবে এখন দাম একটু কম। ধান ও সরিষার মৌসুমে কামলার দাম বেড়ে যায়।
এভাবেই বছরজুড়ে সময়ভেদে ভিন্ন ভিন্ন দামে এ ‘মানুষ বিক্রির হাটে’ দেখা মেলে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা খেটে খাওয়া মানুষের। তাদের শ্রমেই মানিকগঞ্জের অসংখ্য ছোট-বড় কাজ সহজে সম্পন্ন হয়।
এ হাট শুধু কাজের বাজারই নয়, এটি দেশের প্রান্তিক শ্রমজীবী মানুষের এক নির্ভরতার আশ্রয়ও বটে।
আফ্রিদি আহাম্মেদ/এমবি