সাভারে কিডনিকাণ্ড : প্রেমিকের সঙ্গে হাতেনাতে ধরার পর স্ত্রীর রোষানলে স্বামী

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১৭:১৫
---2025-07-03T160711-68665819927d3-687ccfc4e3ca5.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
সাভারের আলোচিত কিডনিকাণ্ডে এবার মুখ খুলেছেন কিডনিগ্রহীতা স্বামী মো. তারেক। তার দাবি, স্ত্রী উম্মে সাহেদীনা টুনি কিডনি দেওয়ার আগে তার কাছ থেকে এক শতাংশ জমি এবং তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলার মালিকানা লিখে নেন।
তারেক অভিযোগ করেন, কিডনি দেওয়ার পরই স্ত্রীর আচরণ বদলে যেতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে প্রেমিকের সঙ্গে ‘হাতেনাতে’ ধরেন বলে দাবি করেন। এরপর থেকেই উল্টো তারেককেই মামলায় জড়িয়ে ‘শাস্তি’ দেওয়া শুরু হয়।
তারেক জানান, এক শতাংশ জমিসহ তিন তলা বাড়ির দ্বিতলের মালিকানা লিখে নিয়ে কিডনি দেন স্ত্রী। কিন্তু পরবর্তীতে টুনি জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়। আর পরকীয়া প্রেমিকের সাথে হাতেনাতে ধরার পরই স্ত্রীর রোষানলে পরেন তারেক। এর পর থেকেই শাস্তি শুরু হয় তারেকের।
তারেক জানান, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় এসে বসবাস শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে মালয়েশিয়ায় যান জীবিকার সন্ধানে। সেখান থেকে উপার্জনের টাকা পাঠিয়ে সাভারের কলমায় জমি কেনেন, পরে বাড়ি তৈরি করেন।
২০০৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঘটকের মাধ্যমে বিয়ে করেন টুনিকে।
তারেক বলেন, ‘সাভারের কলমার এলাকার একজন ঘটক উম্মে সাহেদীনা টুনির সন্ধান দেন। আমাদের বাসায় যে খালা রান্না করতেন তিনিও আমাকে বললেন, ‘মামা টুনি’কে আমি দেখেছি, অনেক সুন্দরী’। পরে টুনির খালা-খালু আমাকে এসে দেখে বিয়ের জন্য রাজি হন। আমি টুনিকে না দেখেই আংটি নিয়ে ২০০৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করতে যাই। সে সময় আমার বাড়ি ছিল। কিন্তু টুনিরা কোয়ার্টারে থাকতো। এখন অবশ্য তাদের অনেক টাকা।’
বিয়ের পর কয়েক বছর সংসার ভালো চললেও, তারেকের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংসার ভালোই চলছিল। দুই জনের সংসারে আসে নতুন মেহমান। কিন্তু আমার জীবনে হঠাৎ নেমে আসে অন্ধকার। সংসারের দুই বছরের মাথায় আমার কিডনি রোগ ধরা পড়ে। বিদেশ থেকে এসে আমি পোশাক কারখানায় সাপ্লাই ব্যবসা করতাম। তখন আমার টাকা-পয়সা ছিল। আমি ভারতে চিকিৎসা শুরু করলাম। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ডা. বললেন কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। ’
তারেক আরও বলেন, ‘কিন্তু সেসময় আমার অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। বাসা ভাড়া যা পেতাম তাই দিয়ে কোনোমতে সংসার চালিয়ে চিকিৎসা করতাম। সর্বশেষ আমার স্ত্রী আমাকে কিডনি দিতে রাজি হলেন। কিন্তু বিনিময়ে আমার বাড়ির দ্বিতীয় তলার মালিকানা লিখে দিতে হবে বলে দাবি করলেন। তখন আমাদের সম্পর্ক ভাল ছিল, তাই নির্দ্বিধায় এক শতাংশ জমিসহ দ্বিতীয় তলা লিখে দিলাম। পরে টুনি আমাকে ভারতে গিয়ে তার মা-বোনের নিষেধ উপেক্ষা করে আমাকে কিডনি দিলো। কিন্তু আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারিনি। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ওষুধ খেয়ে আমি আমার সক্ষমতা হারাতে থাকি। ফলে ধীরে ধীরে টুনির সাথে আমার সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। প্রবেশ করে টিকটক জগতে। টিকটক জগতে প্রবেশের পর, তার চরিত্রের সমস্যা আমার চোখে ধরা পরে। তার পরেও আমি দুই থেকে তিন মাস কষ্ট করে মেনে নেই। কিন্তু যেদিন ভাড়াটিয়ার সাথে এক রুমে হাতেনাতে ধরি সেদিন আর সহ্য করতে পারিনি। আমি দুটি থাপ্পড় দিয়ে সেই ঘর থেকে টুনিকে নিয়ে আসি। ভাড়াটিয়ারা সবাই দেখেছে।’
স্ত্রীর পরকীয়া ফাঁস হওয়ার পরই উল্টো তারেকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ওঠে। তিনি বলেন, ‘হাতে-নাতে ধরার পর আমার শাস্তি শুরু হয়। আমাকে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। জেল থেকে বের হয়ে অসুস্থ হয়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি হই। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে শুনি টুনি আমার বিরুদ্ধেই পরকীয়া আর অনলাইন জুয়ার মিথ্যা গল্প সাজিয়েছে।’
তারেকের বাড়ির সাবেক ভাড়াটিয়া মো. হৃদয় খান বলেন, ‘তিনি ওই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তারেক যা বলেছেন সবই সত্যি কথা বলেছেন। তারেকের স্ত্রী'র চরিত্র আগে থেকেই খারাপ।’
পরকীয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তারেক বলেন, ‘টুনি বিভিন্ন মাধ্যমে বলেছে, আমি শারীরিকভাবে অক্ষম। এই অবস্থায় আমার অন্য নারীর সাথে সম্পর্ক রাখার ক্ষমতা কীভাবে রাখি প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি বলেন, আমার ফোন, কাপড়চোপড় সবকিছু ওই বাড়িতে রেখেই আমার ভাইয়ের বাসায় আছি। তারেক বলেন, আমার বাড়ি ভাড়ার সমস্ত টাকা টুনি নিয়ে যাচ্ছে। আমি ঠিকঠাকমতো ওষুধ খেতে পারছি না। আমি আমার বাড়ির অংশের ভাড়াটা চাই, যাতে আমার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারি। টুনির সাথে আমার এখনও বিচ্ছেদ হয়নি। এই অবস্থায় আমার সাথে এধরনের আচরণ করা অমানবিক।’
উম্মে সাহেদীনা টুনি অবশ্য তারেকের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে ঠিক উল্টো অভিযোগ এনেছেন। তার ভাষ্য, ‘কিডনি দিয়ে স্বামীর জীবন বাঁচানোর পর তারেক জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়, অনলাইন জুয়ায়, এমনকি তাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেন।’
- আরিফুল ইসলাম সাব্বির/এমআই