চনপাড়া-ডেমরা সেতু এখন মরণফাঁদ, দ্রুত সংস্কারের দাবি
ঝুঁকির মুখে প্রতিদিন শত শত মানুষের জীবন

এন বি আকাশ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৫, ১৮:২৪
-6880d463c7506.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বালু নদের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা চনপাড়া-ডেমরা সেতুটি এখন আর শুধু একটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো’ নয়, এটি রূপ নিয়েছে এক ভয়াবহ মৃত্যুফাঁদে।
প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ ও স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে এই সেতু।
সেতুর পিলারে ফাটল, রড বের হয়ে যাওয়া, পলেস্তারা খসে পড়া আর কাঁপতে থাকা কাঠামো সবই যেন ঘোষণা দিচ্ছে—ধসে পড়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার!
চনপাড়া-ডেমরা সেতু দিয়ে যারা চলাচল করেন, তারা যেন প্রতিদিনই মৃত্যুকে হার মানিয়ে গন্তব্যে পৌঁছান। স্থানীয়রা জানান, যেকোনো সময় বিকট শব্দে সেতুটি ধসে পড়তে পারে। এরপর শুধু মৃতদেহ খুঁজে ফিরবে মানুষ।
এই সেতুটি রাজধানী ঢাকার পাশে অবস্থিত রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার সংযোগস্থলে। ডেমরা-রূপগঞ্জ-কালীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি।
সরেজমিনে দেখা যায় , সেতুর বিভিন্ন অংশ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। অনেক জায়গায় রড বের হয়ে আছে। নিচ দিয়ে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচলের কারণে পিলারগুলো প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারী যান চলাচলের সময় পুরো সেতু কাঁপে—যেন মৃত্যুর সতর্ক ঘণ্টা। সেতুতে ভারী ট্রাক উঠলেই আশপাশে দোকানিদের মুখে শুধু একটাই শব্দ—‘ভয়’।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, বহু বছর ধরে সেতুটি এমন ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও কোনো কার্যকর সংস্কার হয়নি। এলজিইডি শুধু সাইনবোর্ড লাগিয়ে দায় শেষ করেছে। বাস্তবে কোনো মেরামত বা বিকল্প সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
চনপাড়ার বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, ‘স্কুলের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-রোগী—সবাই এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করে। অথচ কর্তৃপক্ষ যেন উদাসীন।’
ডেমরা এলাকার রুনা আক্তার বলেন, ‘বাবার বাড়ি ওপারে। সন্তানদের নিয়ে যেতে ভয় লাগে। সেতু ভেঙে গেলে কি হবে?’
শিক্ষার্থী জিসান বলেন, ‘সেতু পার হওয়ার সময় মনে হয় এখনই বুঝি ভেঙে পড়বে!
সেতুটি ১৯৯১ সালে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই ফাটল ধরে। ২০১২ সালের পর থেকে পিলার ও রেলিং খসে পড়লেও কোনো সংস্কার হয়নি। প্রতিনিয়ত বাল্কহেডের ধাক্কায় পিলারগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, দ্রুত সংস্কার না হলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শুধু এলজিইডি নয়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারাও বিষয়টি নিয়ে আশ্চর্যজনকভাবে নীরব।
এনসিপি রূপগঞ্জ প্রধান সমন্বয়কারী ইউসুফ বলেন, ‘প্রতিদিন মানুষ এই সেতু দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কেউ জানে না, এই যাত্রাই হয়তো তাদের শেষ যাত্রা হতে পারে।’
তিনি ভারী যানবাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে এবং লোহার ব্যারিকেড বসানোর দাবি জানান।
রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, সেতুটি দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ। ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।
রূপগঞ্জ ইউএনও মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবহিত করেছি। আশা করছি দ্রুতই নতুন সেতুর কাজ শুরু হবে।
এআরএস