কক্সবাজার সৈকতে ৭ মাসেই ১২ পর্যটকদের প্রাণহানি

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৫, ১৯:২৪

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের প্রাণহানি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। চলতি বছরের মাত্র সাত মাসেই সাগরে ডুবে অন্তত ১২ জন পর্যটক প্রাণ হারিয়েছেন। সচেতন মহলের অভিযোগ, পর্যাপ্ত সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবেই বাড়ছে দুর্ঘটনা।
সবশেষ ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী ঘুরতে এসে উত্তাল সাগরে নামেন। স্রোতের তোড়ে ভেসে যান তারা। এর মধ্যে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা গেলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছেন শিক্ষার্থী অরিত্র হাসান। তাকে উদ্ধারে টানা তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন লাইফ গার্ড, বিচ কর্মী, স্থানীয় জেলে ও নৌবাহিনীর সদস্যরা।
নিখোঁজ অরিত্রের মা জেসমিন আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলেটা আমার বুকে ফিরে আসুক—এটাই আমি চাই। এই অথৈ সমুদ্রে রেখে তো আমি যেতে পারব না। আমার ছেলেকে রেখে বাসায় আমি একটা মুহূর্তও থাকতে পারব না।
এ ঘটনাই আবারও প্রশ্ন তুলেছে—সাগরে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কি?
সি সেইভের ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সতর্কতা না মেনে সাগরে নেমে অনেকেই বিপদে পড়ছেন। চলতি বছরই ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জোয়ার-ভাটার সময় জেনে সাগরে নামতে হবে। বিপদজনক স্থান চিহ্নিতকরণ এবং লাইফ গার্ডের পরামর্শ ছাড়া সাগরে না নামার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
বর্তমানে লাবণী থেকে কলাতলী পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় মাত্র ২৭ জন লাইফ গার্ড দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের পাশে কিছু স্বেচ্ছাসেবী থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
পর্যটকদের নিরাপত্তায় নতুন উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহেদুল আলম বলেন, সি-নেটিংয়ের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। এমন পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করা হবে যাতে পর্যটকরা উপকৃত হন।
লাইফ গার্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে কক্সবাজার সৈকতে সাগরে ডুবে ৬৪ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে গত দুই বছরেই ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তবে একই সময়ে ৮০০ জনেরও বেশি পর্যটককে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন। অন্যথায় বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ইমতিয়াজ মাহমুদ ইমন/এমবি