Logo

সারাদেশ

অযত্ন-অবহেলায় নীলফামারীর ঐতিহাসিক হরিশ্চন্দ্র রাজার বাড়ি

Icon

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১০:২২

অযত্ন-অবহেলায় নীলফামারীর ঐতিহাসিক হরিশ্চন্দ্র রাজার বাড়ি

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সংস্কার আর সংরক্ষণের অভাবে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার খুটামারী ইউনিয়নের হরিশ্চন্দ্র রাজার বাড়ি। স্থানীয়ভাবে এটি ‘হরিশ্চন্দ্র পাঠ’ নামে পরিচিত।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে এই রাজবাড়িতে বিচার কার্য, পুঁথিপাঠ, ধর্মীয় আচার এবং পূজা-পার্বণ অনুষ্ঠিত হতো। বাড়িটির নামানুসারে পুরো গ্রামের নাম হয় ‘হরিশ্চন্দ্র পাঠ’।

বর্তমানে প্রায় পৌনে দুই বিঘা জমির ওপর অবস্থিত রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ মাটির ওপরে দৃশ্যমান। ঢিবির মাঝে পাঁচটি বিশাল কালো পাথর ঘেরা স্থানে এক সময় রাজবাড়ির মূল কাঠামো ছিল। প্রাচীন কালের এই স্থাপত্যটি অলৌকিকভাবে এক রাতেই মাটির নিচে দেবে যায় বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

সাবেক ইউপি সদস্য অতুল রায় বলেন, ‘এই ঢিবির উচ্চতা আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ ফুট। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কমে এখন ১০-১২ ফুট হয়েছে। পাথরের কিছু অংশ মাঝে মাঝে আবার মাটির ওপরে ভেসে ওঠে।’

প্রতিবছর ১লা ফাল্গুনে এখানে শিবরাত্রি মেলা বসে। মেলায় স্থানীয় পণ্যের সমাহার দেখা যায়—গুড়ের জিলাপি, চিনির বাতাসা, তেলপিঠা, কাচের ও মাটির তৈজসপত্র, কাঠের আসবাবপত্র ও খেলনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, একটি টিনশেড মন্দির ও রাজবাড়ির কিছু ধ্বংসাবশেষ এখনো টিকে আছে। সেই আমলের একটি বিশাল বটগাছও রয়েছে, যেখানে আগে হাজার হাজার হরিতাল পাখি বাস করত, এখন আর সেগুলোর দেখা মেলে না।

জনশ্রুতি অনুসারে, ব্রিটিশ আমলে খননের সময় একটি কক্ষের দরজার সন্ধান পাওয়া যায়। আটজন শ্রমিক সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে হঠাৎ দরজা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে আর খোলা যায়নি। এরপর থেকে আর কোনো খনন বা সংস্কার হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা উপেন্দ্র চন্দ্র রায় (৭৩) বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি, কেউ এই জায়গা থেকে কিছু নিয়ে গেলে রক্তপাত হয়ে মারা যায়। তাই এলাকাটি অলৌকিক বলে মনে করা হয়।’

১৯৯৮ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এটি পুরাকীর্তি এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়। তবে এরপর থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জায়িদ ইমরুল মোজাক্কিন বলেন, ‘এই এলাকাকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান জানান, ‘জেলায় অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছি।’

উল্লেখ্য, জেলায় আরও কয়েকটি পুরাকীর্তি রয়েছে—ভীমের মায়ের চুলা, পাল রাজার বাড়ি, বাহালী পাড়া জমিদার বাড়ি, টুপামারী কাছারিবাড়ি, বিন্না দিঘি (নীলসাগর), নীলকুঠি ও দূর্বাছড়ি গ্রামের মোগল আমলের স্থাপত্য।

এআরএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর