ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক-শ্রমিকদের কর্মবিরতি, যাত্রীদের দুর্ভোগ

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৮:০২
---2025-07-27T180212-6886157041e86.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে অনির্দিষ্টকালের জন্য সিএনজি চালিত অটোরিকশা মালিক-চালকদের কর্মবিরতি চলছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিএনজি অটোরিকশা মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে রোববার (২৭ জুলাই) সকাল থেকে উপজেলাজুড়ে শুরু হওয়া এ কর্মবিরতিতে বন্ধ রয়েছে সিএনজি চালিত অটোরিকশা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
এর আগে শনিবার (২৬ জুলাই) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মেড্ডা এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক ও শ্রমিকদের যৌথ সংগঠন ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিএনজি অটোরিকশা মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’র জরুরি সভা থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
রোববার সকালে সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, লাঠি নিয়ে জড়ো হয়ে আছেন শ্রমিকরা। তবে কোনো সিএনজি ছেড়ে যাচ্ছে না। যাত্রীরা ব্যাটারিচালিত আটোরিকশা করে যেতে চাইলে সিএনজি শ্রমিকরা তাদের গাড়ির সিট খুলে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। যাত্রীরা পরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন।’
অরুয়াইল এলাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার জন্য এসেছিলেন এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমি সকাল ৭টায় বাসা থেকে বাহির হয়েছি, বিশ্বরোড আসতে পাঁচবার গাড়ি চেঞ্জ করতে হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে বিশ্বরোড এসেও সিএনজি পেলাম না। আমার পরীক্ষা কেন্দ্রে যদি সময়মতো উপস্থিত হতে না পারি তাহলে আমার একটা বছর শেষ হয়ে যাবে। এর দায়ভার কে নিবে?
রাসেল মিয়া বলেন, আমি বিশ্বরোড থেকে সিএনজি দিয়ে নন্দনপুর নিয়মিত অফিসে যায়। আজ দেখি সিএনজি নাই, এখন বিশ্বরোড থেকে হেটে যেতে হচ্ছে, আমি জানি না তাদের কি দাবি তবে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করব তাদের দাবি মেনে জনদুর্ভোগ রোধ করবে।
এদিকে সড়কে কিছু ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে এসব চলাচলেও সিএনজি শ্রমিকরা মারধর করে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সংগঠনের নেতা স্বপন মিয়া জানান, সিএনজি কর্মবিরতির সাথে আমাদের ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা কোন সম্পর্ক নেই। তাদেরকে কালকেও বলেছি রিকশার বিষয়ে কোনো কথা থাকলে রিকশার সংগঠন ও শ্রমিকরা আছে। তাদেরকে সাথে নিয়ে কথা বলবেন। তারা আজকে বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের ব্যাটারিচালিত আটোরিকশা চালকদের মারধর করছে। আমরা সংঘর্ষে লিপ্ত হতে চাই না। আমরা আইনের সহায়তা চাচ্ছি। আর যদি তারা না পারে তাহলে আমরা রিকশাচালকরা অন্য চিন্তা করব।
সংগঠনের নেতারা জানায়, সড়কে ট্র্যাফিক পুলিশের লাগাতার হয়রানি, অতিরিক্ত অর্থ দাবি, বিনা কারণে গাড়ি জব্দ এবং লাইসেন্স সংক্রান্ত দুর্নীতির প্রতিবাদে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আন্দোলন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও অহিংস পদ্ধতিতে চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলমান থাকবে। তাদের অভিযোগ ট্র্যাফিক পুলিশকে ঘুষ না দিলে মামলা ও জরিমানার ভয় দেখিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ১০০টিরও বেশি সিএনজি অটোরিকশা জব্দ রয়েছে।
এ ছাড়াও, বিআরটিএ অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্সে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সিএনজি লাইসেন্স কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে, ফলে মালিক-চালকরা আইনি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে। যাদের কাগজ পত্র নেই বা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া চলছে তাদের গাড়ি আটক করা হচ্ছে। কাগজপত্র আনলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। যাদের কাগজপত্র আছে তারা নির্বিঘ্নে চলতে পারছে। তারা চাচ্ছে তাদের কোনো গাড়ি যেন আমরা না ধরি। ট্রাফিক পুলিশ যেন কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারে। আর তাদের কোনো প্রতিনিধিও এ বিষয়ে আমাদের কাছে আসেননি।’
- মো. রিমন খান/এমআই