Logo

সারাদেশ

ওজন মেপেই চলে সত্তোর্ধ মজিদ চাচার সংসার

Icon

জুয়েল হাসান, বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৮:৫৩

ওজন মেপেই চলে সত্তোর্ধ মজিদ চাচার সংসার

ওজন মেপেই চলে সত্তোর্ধ মজিদ চাচার সংসার। ছবি : বাংলাদেশের খবর

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে এসে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবনের পাশে, লেকের ধারে বসে আছেন আব্দুল মজিদ আকন্দ (৭০)। তার হাতে একটি ছোট ওজন মাপার যন্ত্র। এই যন্ত্রই তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। হাত পেতে নয়, নিজের শ্রমেই জীবন ধারণের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছেন এই আত্মমর্যাদাশীল মানুষটি।

আব্দুল মজিদ আকন্দ যিনি সকলের কাছে ‘মজিদ চাচা’ নামেই পরিচিত, ওজন মাপার জন্য কোনো নির্দিষ্ট মূল্য ধার্য করেননি। তার উপার্জন নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের ভালোবাসার ওপর-কেউ দেন ৫ টাকা, কেউ ১০ টাকা, আবার অনেকে বিনা ওজনেই বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। এই সামান্য অর্থেই চলে তার সংসার, যেখানে রয়েছেন স্ত্রী হালিমা বেগম। তিন মেয়ের মধ্যে দু’জনের বিয়ে হয়েছে, আর এক মেয়ে অকালে পৃথিবী ছেড়ে গেছে।

মজিদ চাচার রাত কাটে কলেজের মসজিদেই। সপ্তাহে একবার তিনি গোবিন্দগঞ্জে নিজের বাড়িতে যান স্ত্রীর খোঁজ নিতে। স্ত্রীর চিকিৎসার খরচটুকুও তাকে এই সামান্য উপার্জন থেকেই মেটাতে হয়। মজিদ চাচার বিনয়ী ও সজ্জন আচরণ মুগ্ধ করে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তাকে এভাবে দেখছি। তিনি ছোট-বড় সবার সাথে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করেন, যা আমার খুবই ভালো লাগে। এই বয়সে ভিক্ষাবৃত্তি না করে নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করাটা সত্যিই অনুসরণীয়।’

উদ্ভিদ বিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘মজিদ চাচা সবাইকে দেখলেই সালাম দেন। উনার ব্যবহার খুব ভালো লাগে। আমাদের সাথে একরকম বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে গেছে।’

কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. শওকত আলম মীর মজিদ আকন্দের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘এই কলেজে যোগদানের পর থেকেই মুরুব্বিকে ক্যাম্পাসে দেখছি। উনি মূলত আমার বাসভবনের সামনে লেকের পাশে একটি ওজন মাপার যন্ত্র নিয়ে বসেন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারীরা ওজন মেপে তাকে কিছু টাকা দেন, যা দিয়ে তার সংসার চলে। সবচেয়ে মুগ্ধকর বিষয় হলো, উনি সবাইকে সালাম দেন এবং নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। কলেজের সবাই মজিদকে খুব পছন্দ করে। ভিক্ষাবৃত্তি না করে ওজন মেপে নিজের সংসার চালানোটা সত্যিই অনুকরণীয়।’

আব্দুল মজিদ আকন্দ নিজের জীবনের তৃপ্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি। এভাবেই বাকি জীবন পার করে দিতে চাই। কারও কাছে হাত পাততে হয়নি, এটুকুই শান্তি।’

  • এমআই
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর