সাটুরিয়ায় সরকারি পশু চিকিৎসায় অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৫, ২০:৫১
-6888dfe0ba3c2.jpg)
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় সরকারি পশু চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে খামারিদের। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইমরান হোসেন সরকারি দায়িত্বে থেকেও টাকা ছাড়া সেবা দিচ্ছেন না। এমনকি অর্থ নেওয়ার পরেও মিলছে না মানসম্মত চিকিৎসা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত সময়ে ডা. ইমরান হোসেন কখনো নিজেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দিতেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে তার একান্ত ছবি অফিস কক্ষে টাঙিয়ে রাখতেন। বর্তমানে এক প্রভাবশালী বিএনপি নেতার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করছেন এবং অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছেন।
তার বিরুদ্ধে সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রতিটি ভিজিটে অন্তত ৪ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ৭ টাকার ইনজেকশন ৬০০ টাকা এবং ২২০ টাকার দেশি ওষুধকে বিদেশি কোরিয়ান বলে চালিয়ে হাজার হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
ভাশিয়ালি কৃষ্টপুর গ্রামের বিউটি আক্তার বলেন, রোজার ঈদের ৩ দিন আগে ইফতারের পর ডা. ইমরান আমার কাছ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা নিয়ে প্রেসক্রিপশন করে গেছেন। প্রথমে ৪ হাজার টাকা চান। পরে অনেক আকুতি-মিনতির পর আমার কাছ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা নেন। আমার চাচার বাড়ি থেকেও সাড়ে ৩ হাজার টাকা নিয়েছেন।
একই গ্রামের বাচ্চু মিয়ার পুত্রবধূ রুমা আক্তার বলেন, ১ মাস আগে সকাল ১০টায় ইমরান ডাক্তার এসেছিলেন। প্রেসক্রিপশন করে ৪ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। আমার গর্ভবতী গরু দেখে বলেছিলেন, বাছুর নাকি টিকবে না। তার দেওয়া ভ্যাকসিন ও ওষুধ খেয়ে গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। পরে আমি নিজের প্রচেষ্টায় শুধু নাপা খাইয়ে গরুকে সুস্থ করি।
হরগজ গ্রামের শরাফত আলী বলেন, আমার গরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে একজনের মাধ্যমে ডা. ইমরান আসেন। তিনি গরু দেখার আগেই সিরিঞ্জ ভরে ওষুধ নিয়ে আসেন। কী ওষুধ দিয়েছেন তা কিছুই আমাদের জানাননি। ওষুধ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। এত টাকা কেমন করে নেন, আমার মাথায়ই আসে না। আমি তাকে এনেছি ২০২৫ সালে। কিন্তু প্রেসক্রিপশনে তার স্বাক্ষরের পাশে ২০২৩ সালের তারিখ দিয়েছেন।
সাটুরিয়া উপজেলার এক খামারির গৃহিণী শেফালি বলেন, প্রথমে আমাদের বাড়ি এসেছিলেন, ২৫০০ টাকা নিয়েছেন। পাশের বাড়ি থেকেও ২৫০০ নিয়েছেন। আরেক বাড়ি থেকে নিয়েছেন ৩৫০০ টাকা। এরপর চিকিৎসা দিয়ে গেছেন। পরে গরু খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। অসুস্থ হওয়ায় তাকে আমি ফোন দিলে ডা. ইমরান বলেন, ‘আপনার গরুর কোনো চিকিৎসাই আমি করব না।’ ২৫০০ টাকা নিয়েও বলেন, ‘আমি কোনো ভিজিটই নিইনি।’
অভিযোগের বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইমরান হোসেন বলেন, একটা ছেলে ও একটি মহল আমার সঙ্গে শত্রুতা করে এসব করছে। আপনি বলেন, এটা কি সম্ভব? টাকা নেওয়ার যে কথাগুলো উঠেছে -এগুলো ষড়যন্ত্র। হয়তো ইনজেকশন লাগছিল, যার দাম ৫০০ টাকার ওপরে। ওইটার টাকা নেওয়া হয়েছে হয়তো।
বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি নিজেকে জেলা বিএনপির এক নেতার আত্মীয় বলে পরিচয় দেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মজিবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আফ্রিদি আহাম্মেদ/এমবি