নারায়ণগঞ্জে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সরকারি বই বিক্রির অভিযোগ

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৭:৪৫

ছবি : সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভিনের বিরুদ্ধে সরকারি বই গোপনে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় উপজেলার ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে।
বই বিক্রির সময় স্থানীয়দের হাতে অধ্যক্ষ, পিকআপ চালক ও চোরাই বই ক্রেতা হলেও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলম মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। এতে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এর আগে অধ্যক্ষ সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ, কাজ না করিয়ে বিল তোলাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে একটি নীল রংয়ের পিকআপ ট্রাক ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজে প্রবেশ করেন। অধ্যক্ষ সুরাইয়া বেগম স্টোর রুম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণির নতুন সব বই কেজি দরে বিক্রি করেন। পিকআপ চালক হেদায়েত উল্লাহ ও বই ক্রেতা মিলে সকল বই পিকআপে তুলে ফেলেন। বিকেলের দিকে স্থানীয়রা বই বিক্রির বিষয়টি টের পেয়ে বইয়ে ক্রেতা, অধ্যক্ষ সুরাইয়া বেগম ও বই ক্রেতাকে হাতেনাতে আটক করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলমকে খবর দেন। পরে সন্ধ্যার দিকে শিক্ষা অফিসার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে বই পুনরায় পিকআপ থেকে নামিয়ে স্টোর রুমে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বই ষ্টোর রুমে নামানোর নির্দেশ প্রদান করলেও মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলম অধ্যক্ষ, বই ক্রেতা ও পিকআপ চালকের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এদিকে, বই বিক্রির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এতে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা আরো জানান, গত বছরের ৫ ই আগস্ট ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়ালের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। আউয়ালের বিরুদ্ধে স্কুলের ১৬ কোটির দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভিত্তিতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে সুরাইরা বেগম অধ্যক্ষ হিসেবে ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরই সুরাইয়া বেগম স্কুল এন্ড কলেজটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করে। সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া স্কুলে ২৫ হাজার টাকার ইলেকট্রিক কাজ করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বিল তোলেন। স্কুলের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ্যে না করে, ব্যক্তিগত অফিসে গোপনে লেনদেন সম্পন্ন করা হয়। কোন শিক্ষক সুরাইয়া বেগমের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে চাকরীচ্যুত হতে হয়। গত কয়েকদিন আগে সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় সিনিয়র শিক্ষক বিমল দাসকে কোন নোটিশ ছাড়াই বরখাস্ত করা হয়েছে। সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।
ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, পর্যাপ্ত বই না নেই বলে আমাদেরকে বই দেওয়া হয়নি। অথচ এখন দেখতে পাচ্ছি বই কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যদি অধ্যক্ষ সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাদের আমরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করবো।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুরাইয়া পারভিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি পক্ষ সব সময় ষড়যন্ত্র করে থাকে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলম বলেন, নতুন পুরাতন মিলিয়ে প্রায় লাখ টাকার বই বিক্রিকালে জব্দ করা হয়। অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। টাকার বিনিময়ে ম্যানেজার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এন বি আকাশ/এএ