Logo

সারাদেশ

চাঁদপুরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতালে তালা

Icon

শাহরাস্তি (চাঁদপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮:৩৫

চাঁদপুরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতালে তালা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

চাঁদপুরের শাহরাস্তির একটি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের সময় নারীর মূত্রথলি কেটে ফেলেন চিকিৎসক। এর জেরে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ওই ভাঙচুরসহ হাসপাতালের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় রোগীর স্বজনেরা। 

শনিবার (২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার ঠাকুর বাজার এলাকার শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত ওই প্রসূতির নাম উম্মে হাসনা রিপা (২৯)।  তিনি উপজেলার পূর্ব নিজমেহার কবিরাজ বাড়ির প্রবাসী দিদার হোসেনের স্ত্রী।

জানা গেছে, গত ২৬ জুলাই প্রসব ব্যথা নিয়ে শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতালে আসেন রিপা। ওই দিন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রিপা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।  তার অস্ত্রোপচারটি করেন শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবসরপ্রাপ্ত জুনিয়র কনসালটেন্ট ও শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তানজিনা সুলতানা। অন্যান্য রোগীর মতো তাকেও কেবিনে রাখা হয় এবং চার দিন পর গত ৩০ জুন ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়।

তবে, বাড়ি যাওয়ার পর রিপার ব্যথা কমার পরিবর্তে আরও তীব্র হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে গত ১৫ জুলাই দুপুরে তাকে ফের একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন রাত পৌনে ৯টার দিকে তাকে কুমিল্লা টাওয়ার হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ওই হাসপাতালে নেওয়ার রিপার স্বজনরা জানতে পারেন, অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসক ভুলবশত রিপার মূত্রথলি কেটে ফেলেছেন এবং পরে কোনো সঠিক চিকিৎসা ছাড়াই তাকে রিলিজ দেওয়া হয়েছিল।

এরপর রোগীকে বাঁচাতে শুরু হয় পরিবারের দৌড়ঝাঁপ। গত ২৬ জুলাই ঢাকার পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রিপাকে। পরদিন তাকে সেই হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। গত ২৮ জুলাই স্থানীয় একটি হাসপাতালে তাকে রক্ত দেওয়া হয়। ২৯ জুলাই ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মারা যান তিনি।

শনিবার সকালে রিপার লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স শাহরাস্তি পৌঁছায়। এ সময় উত্তেজিত স্বজনরা শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতালে হামলা চালায়। হাসপাতাল ভাঙচুরের পাশাপাশি গেইটে তালা লাগিয়ে দেয় তারা।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল চিকিৎসার বিষয়টি গোপন করেছে। আমরা না জেনে এক হাসপাতাল থেকে আরেকটিতে নিয়ে ঘুরেছি। এ কারণে রোগীর রক্তক্ষরণ বেড়ে যাওয়ায় বারবার রক্ত দিতে হয়েছে। চিকিৎসকদের চরম অবহেলার কারণেই আমাদের রোগী মারা গেছেন।’

একই হাসপাতালের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ রয়েছে বলে জানান উপজেলার হাঁড়িয়া গ্রামের আরেক রোগীর স্বজন। তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগে আমার ভাবি নাসরিন আক্তার (২৮) এখানে সিজারিয়ান করান। চারদিন পর রিলিজ নেওয়ার পর হঠাৎ তার ব্লিডিং শুরু হয়। আবার হাসপাতালে আনা হলে তাকে ব্যথানাশক দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সমস্যার বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। পরে কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে এখনো তাকে আইসিইউতে রাখতে হচ্ছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি। জনরোষের আশঙ্কায় তারা গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

শাহরাস্তি থানার ওসি মো. আবুল বাসার বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা দ্রুত হাসপাতালে যাই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আকলিমা জাহান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আবু মুছা আল শিহাব/এএ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর