Logo

সারাদেশ

এক মুঠো ভাতের আশায় বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন ছিয়ারন নেসা

Icon

নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৭:২৮

এক মুঠো ভাতের আশায় বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন ছিয়ারন নেসা

এক মুঠো ভাতের আশায় বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন ছিয়ারন নেসা। ছবি : সংগৃহীত

নড়াইল সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের চরশালিখা গ্রামের ছিয়ারন নেসা। বয়স ৮৫। স্বামী মারা গেছেন প্রায় ২৫ বছর আগে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে, কষ্ট করে মানুষ করেছেন মেয়ের রেখে যাওয়া শিশুকন্যা কমলাকে। বুকের দুধ খাইয়ে আড়াই মাস বয়স থেকে বড় করেছেন সেই নাতনিকে। নিজের শেষ সম্বল ৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে বিদেশ পাঠিয়েছেন নাতনির স্বামীকে। অথচ আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সেই নাতনিই তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ছিয়ারন নেসা।

বর্তমানে ঘরবাড়ি হারিয়ে ভিটেমাটি ছাড়া ছিয়ারন নেসা গ্রামের এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছেন। কখনো একবেলার খাবার জোটে, কখনো জোটে না। আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশীদের দয়ার ওপর। ছেলেও তাকে জায়গা দেননি বলে অভিযোগ।

ছিয়ারন নেসা বলেন, ‘নাতনি কমলারে দুই মাস বয়স থেইকা মানুষ করছি। জমি দিছি, জায়গা দিছি। পাঁচ কানি দিতে চেয়েছিলাম, সে সব নিয়ে গেছে। এখন কোনো খোঁজ নেয় না। আমি ভিক্ষা করে খাই, ছেলে-মেয়েরাও দেখে না।’

চর শালিখা গ্রামের বাসিন্দা মো. মুরাদ শেখ বলেন, ‘গ্রামবাসী হিসেবে আমরা ছিয়ারন নেসাকে কমলার বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু কমলা ও তার স্বামী রাজি হয়নি। বরং আমাদের কয়েকজনের নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছে।’

প্রতিবেশীরা জানান, কমলার বয়স যখন মাত্র তিন মাস, তখন তার মা মারা যান। এরপর থেকেই নানি ছিয়ারন নেসা তাকে লালনপালন করেন, বিয়ে দেন, এমনকি সম্পত্তি বিক্রি করে তার স্বামীকে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থাও করেন। বিনিময়ে কমলা ও তার স্বামী নানির সব জমি লিখে নেন। পরে আর দেখভাল করেননি।

প্রতিবেশী ইয়াদুল শেখ বলেন, ‘এই বৃদ্ধা মহিলা চার সন্তান মানুষ করেছে, নাতনির জন্য জীবন কাটিয়েছে। আজ সেই নাতনি তাকে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। এখন তিনি ভিক্ষা করে দিন কাটান।’

ছেলেও মায়ের পাশে নেই। ছেলে বাবু মোল্যা বলেন, ‘মা সব জমি অন্যের নামে লিখে দিয়েছে, আমাদের কিছু দেয়নি। তাই আমরা আর খোঁজ নেই না।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য সাখা কাজী বলেন, ‘কমলা ছিয়ারনের মেয়ের মেয়ে (নাতনী)। তার মা মারা যাওয়ার পর থেকেই ছিয়ারন তাকে বড় করেন। পরে নিজের সম্পত্তির বেশির ভাগই নাতনির নামে লিখে দেন। এখন ছেলেরাও বঞ্চিত, নানিও রাস্তায়।’

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কমলা রানি বলেন, ‘জমি অনেক আগেই লিখে দিয়েছে। নানি ২০ বছর ধরে আমার সঙ্গেই ছিলেন। গ্রামের কিছু লোক তাকে ব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করাচ্ছে।’

এ বিষয়ে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। নানির সম্পত্তি নিয়ে ও তাকে দেখভাল না করার অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া কমলা রানির পক্ষ থেকেও মারধরের অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

  • কৃপা বিশ্বাস/এমআই
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর