স্বাস্থ্যখাতের মাফিয়া স্বাচিপ নেতা রতন এখনো আত্মগোপনে

মাল্টিমিডিয়া করেসপন্ডেন্ট, জামালপুর
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৮:২৭
-(31)-6890a741dd740.jpg)
ডা. মোশায়ের উল ইসলাম রতন। ছবি : বাংলাদেশের খবর
দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ধরে জামালপুর জেলার স্বাস্থ্যখাত ছিল আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নেতাদের নিয়ন্ত্রণে। আর এই নিয়ন্ত্রণের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন জেলা স্বাচিপের সভাপতি ডা. মোশায়ের উল ইসলাম রতন। সরকার পরিবর্তনের পরও এখনও তিনি এবং তার সিন্ডিকেট সদস্যরা নানা কৌশলে স্বাস্থ্যখাতকে জিম্মি করে রেখেছেন।
সূত্র জানায়, জামালপুর জেলায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা, প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, নিয়োগ-বদলি, পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ এমনকি সরঞ্জাম ক্রয়েও ডা. রতন ও তার অনুসারীদের দখলদারি ছিল চোখে পড়ার মতো। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের প্রভাবশালী নেতাদের আশীর্বাদে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ‘স্বাস্থ্য খাতের অঘোষিত সম্রাট’। তার প্রভাবে সরকারি সিভিল সার্জন অফিস থেকে শুরু করে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত সবখানেই চলেছে নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি।
সরকারি টাকায় নির্মিত সিভিল সার্জনের অফিসের কনফারেন্স রুমটি নিজের বাবার নামে নামকরণ করে প্রভাবের নজির স্থাপন করেন। মেয়েকে জামালপুরে রেখে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া এবং স্বেচ্ছায় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বদলে দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিশেষ অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) পদে থেকে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঠিকাদারদের কাছ থেকে নামে-বেনামে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই অর্থের একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগের তৎকালীন জেলা নেতাদের পকেটে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে এখানেই শেষ নয়। জামালপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালে প্রধান নির্বাহী পদে থেকেই শুরু করেন নিয়োগ বাণিজ্য। যুব মহিলা লীগের নেত্রীদের টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। সরঞ্জাম ক্রয় থেকে শুরু করে পরীক্ষার খরচ দ্বিগুণ করে চালিয়ে গেছেন দাপটের সঙ্গে। বর্তমানে তিনি সেই পদে না থাকলেও আগের তুলনায় পরীক্ষার খরচ অর্ধেকে নেমে এসেছে।
ব্যক্তিগতভাবে শহরে পরিচালনা করছেন পরিচর্যা ক্লিনিক নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতাল। সেখানেও সরকারি চিকিৎসকদের দিয়ে রোগী পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে ঢাকায় করেছেন নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ, যার মধ্যে ৬-৭টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে।
২০২৫ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনেও তার ভূমিকা ছিল সরাসরি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের দমন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইসলামী আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি আলহাজ মুফতি মোস্তফা কামাল বলেন, স্বাচিপ সভাপতি একজন রাজনৈতিক দালাল। জামালপুরের স্বাস্থ্যখাতের লুটপাটে তিনিই গডফাদার ছিলেন। আমরা তার ও তার অনুসারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
জামালপুর নাগরিক ভয়েসের সভাপতি কাফি পারভেজ বলেন, ‘স্বাচিপ নেতাদের কারণে স্বাস্থ্যখাত ছিল দুর্নীতির আখড়া। তাদের বিচার না হলে স্বাস্থ্যখাতকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।’
জেলা বেসরকারি ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘স্বাচিপের নেতারা স্বাস্থ্যখাত নিয়ে ব্যবসা করেছে। তারা এখনো প্রভাব খাটাচ্ছেন। ডা. রতন ছিলেন সেই সিন্ডিকেটের গডফাদার।’
- মেহেদী হাসান/এমআই