‘আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ছিল সিয়ামের, আওয়ামী গুলিতে নিভে গেল জীবন’
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৬:০৭

ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে কাঁদছেন মা তানিয়া আক্তার || ছবি : বাংলাদেশের খবর
আকাশ ছুঁয়ে উড়তে চেয়েছিল সে। স্বপ্ন ছিল পাইলট হওয়ার, বাবা–মাকে হজ করানোর। সেই স্বপ্ন এখন শুধু স্মৃতি। পনেরো বছরের ছেলেটি আর কখনও ফিরে আসবে না ভেবে মা তানিয়া আক্তারের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে আজও।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। রাজধানীমুখী ছাত্রদের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেয় ঢাকা সাভারের কিশোর আলিফ আহমেদ সিয়াম। শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে সেদিন সাভার থানা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় আনন্দ মিছিল করছিল ছাত্ররা। হঠাৎ গুলি চালায় পুলিশ। সিয়ামের মাথায় গুলি লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে, পরে এনাম মেডিকেলে নেওয়া হয় তাকে। তিন দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ৭ আগস্ট বিকেলে মৃত্যু হয় তার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরাও অংশ নেয় সেই গুলিবর্ষণে।
সিয়াম ছিল সাভার ডেইরি ফার্ম হাই স্কুলের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের বড় বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। পিতা বুলবুল কবীর ও মাতা তানিয়া আক্তার চাকরিসূত্রে ঢাকায় বসবাস করেন।
সিয়ামের মা তানিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে পাইলট হতে চেয়েছিল। হাসিনা সরকারের গুলি খেয়ে শহীদ হয়েছে সে। এমন নিষ্ঠুরতা আমি কোনোদিন ভুলব না। এক বছর পার হয়ে গেছে, কেউ আসেনি আমাদের খবর নিতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শহীদদের বিপ্লবী স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি বারবার ওঠেছে। কিন্তু যারা আজ ক্ষমতায়, তারা মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। এটা সবচেয়ে কষ্টের।’
সিয়ামের বাবা বুলবুল কবীর বলেন, ‘আমরা বিচার চাই। হত্যাকারীরা যেন শাস্তি পায়। আর চাই, সিয়ামের নামে অন্তত কোনো সড়ক বা স্কুলের নাম হোক। তাহলে হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবে, সে কী রেখে গেছে।’
প্রসঙ্গত, আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ইতিহাস বদলে দেওয়া গণ-অভ্যুত্থান দিবস। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের (২০২৪ সালের ৫ আগস্ট) এই দিনে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদে চেপে বসা ১৬ বছরের স্বৈরাচারের অবসান হয়। পরবর্তীতে ৫ আগস্টকে গণ-অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার।