বেগমগঞ্জে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা : খালে ডুবল তিন প্রজন্ম

মোস্তাফিজুর রহমান টিপু, লক্ষ্মীপুর
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৪৫
-6893325545354.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ঘরজুড়ে কান্না। স্তব্ধ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের কাসালী বাড়ি। ওমান প্রবাসী বাহার হোসেনের পরিবারের সদস্যরা তার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ফেরা উদযাপন করতে চেয়েছিলেন। তবে সেই আনন্দ পরিণত হলো শোকের মাতমে।
ঢাকার বিমানবন্দর থেকে প্রিয়জনকে আনতে গিয়ে চিরতরে হারিয়ে গেলেন একই পরিবারের সাতজন সদস্য। নিহতদের মধ্যে তিনজনই শিশু।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) গভীর রাতে ঢাকা থেকে ফেরার পথে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজার এলাকায় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস খালে পড়ে গেলে প্রাণ হারান তারা।
বুধবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে কাসালী বাড়ির আঙিনায় কান্নার রোল পড়েছে। একে একে যখন মরদেহগুলো পৌঁছায়, তখন আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে গ্রামের বাতাস।
নিহতরা হলেন—প্রবাসী বাহার হোসেনের মা মুরশিদা (৫০), স্ত্রী কবিতা (২৩), মেয়ে মীম (২), নানী ফয়জুন নেছা (৭০), ভাইয়ের স্ত্রী লাবনী (২৫), ভাতিজি লামিয়া (৮) ও রেশমী (৯)।
এই একটি মাইক্রোবাসে ছিল বাহারের জীবনভর সঞ্চিত ভালোবাসার মানুষগুলো। সবাই হারিয়ে গেল এক ঝটকায়।
মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় বাহার নিজে প্রাণে বেঁচে গেলেও শোকের ভারে নুয়ে পড়েছেন। জীবিত আছেন আরও ছয়জন—বাহারের বাবা আবদুর রহিম, শ্বশুর ইসকান্দর মির্জা, শ্যালক রিয়াজ, ভাইয়ের স্ত্রী সুইটি এবং গাড়িচালক রাজু।
বাহারের বাবার কণ্ঠে শোকের কাঁপন, ‘ছেলে প্রায় আড়াই বছর পর ওমান থেকে ফিরল। তাই আমরা সবাই মিলে ঢাকায় তাকে আনতে যাই। ভোরে বাড়ির কাছাকাছি এসেই ঘটে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা।’
তিনি জানান, ‘গাড়ির দরজা লক করা ছিল। খালে পড়ে যাওয়ার পর ছয়জন কোনোরকমে জানালা দিয়ে বের হয়ে প্রাণে বাঁচলেও বাকি সবাই পানির স্রোতে আটকে পড়েন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পানির নিচে থাকায় তাদের আর বাঁচানো যায়নি।’
বুধবার সকাল থেকেই বাড়িতে উপচে পড়া ভিড়। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব—সবাই এসেছেন সান্ত্বনা দিতে। কিন্তু একে একে সাতজন প্রিয়জনকে হারানোর পর কোনো ভাষাই যেন তাদের কান্না থামাতে পারছে না।
সন্তান হারানো এক পিতার দীর্ঘশ্বাস, স্ত্রী হারানো এক যুবকের নিশ্চুপ কান্না—সব মিলিয়ে কান্নার গাঢ় আবরণে মোড়ানো কাসালী বাড়ির প্রতিটি কোণ।
এআরএস