গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে জেলায় জেলায় বিএনপির বিজয় র্যালি ও সমাবেশ

ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২০:২৯
-689366f8711c6.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে দেশজুড়ে নানা আয়োজনে বিজয় উদ্যাপন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে বুধবার (৬ আগস্ট) ফেনী, খাগড়াছড়ি, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, পাবনা, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ, চরফ্যাসন (ভোলা) ও ময়মনসিংহের নান্দাইলে জেলা ও উপজেলা বিএনপি এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহ বিজয় র্যালি, জনসভা, পথসভা এবং সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে এ দিনটি পালন করে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত এসব কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য দেন। একই সঙ্গে তারা ‘স্বৈরাচার পতনের’ পরও অব্যাহত থাকা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন এবং আসন্ন নির্বাচনের জন্য সংগঠনকে প্রস্তুত করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের খবরের জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে বিস্তারিত।
ফেনী : ফেনীর মহিপালে সংঘটিত গণহত্যার বিচার এবং সে সময় ব্যবহৃত সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়েছে জেলা বিএনপি নেতারা। বুধবার (৬ আগস্ট) ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিজয় র্যালির পূর্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতারা এ দাবি জানান। তারা বলেন, ‘জুলাই সনদ ও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় দেশবাসী স্বস্তি পেয়েছে।’
নেতারা আরও বলেন, ‘যাঁরা বাংলার মানুষের ভোটাধিকার ও সম্পদ লুটপাট করে গণহত্যা চালিয়ে বিদেশে পালিয়েছে, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে শহীদ পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করতে হবে।’ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা বেলাল আহমেদ, মশিউর রহমান বিপ্লব, এড. মেজবাহ উদ্দিন খান, আবু তালেব, এড. শাহানা আক্তার শানু।
সভাপতিত্ব করেন ফেনী জেলা আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল।
বক্তব্য দেন এম এ খালেক, গাজী হাবিব উল্যাহ মানিক, এয়াকুব নবী, আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী, আমান উদ্দিন কায়সার সাব্বির, দেলোয়ার হোসেন বাবুল, এড. মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া, সাইদুর রহমান জুয়েল, নঈম উল্যাহ চৌধুরী বরাত, এস. এম কায়সার এলিন, মোর্শেদ আলম মিলন, হুমায়ুন কবির চৌধুরী, জুলেখা আক্তার ডেইজি প্রমুখ।
পরে শহরের প্রেসক্লাবের সামনে থেকে র্যালি শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ট্রাংক রোডে এসে শেষ হয়।
খাগড়াছড়ি : ‘স্বৈরাচার হাসিনা ও তার দোসররা যেন আর কোনোভাবেই মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে—এমন মন্তব্য করেছেন খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ওয়াঁদুদ ভুইয়া।
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিজয় র্যালি-পরবর্তী জনসমাবেশে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা ১৫ বছর ধরে ছাত্র-জনতার ওপর দমন চালিয়েছে। বিএনপি আর কোনো লুণ্ঠনকারী, প্রতারক, আধিপত্যবাদীকে জন্ম হতে দেবে না।’
র্যালিটি সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে চাপলা চত্বরে গিয়ে সমাপ্ত হয়।
সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রবীনচন্দ্র চাকমা। বক্তব্য দেন এম এম আবছার, এড. আব্দুল মালেক মিন্টু, অনিমেষ চাকমা রিঙ্কু, আ: রব রাজা প্রমুখ।
পঞ্চগড় : বিজয় র্যালির মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি পালন করেছে পঞ্চগড় জেলা বিএনপি। বিকেলে সরকারি অডিটোরিয়াম চত্বর থেকে শুরু হওয়া র্যালিটি জেলা দায়রা জজ কোর্ট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন পল্লি উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন আজাদ। তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান বলেছেন তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষে হোক। এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে গ্রামে-গঞ্জে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৪ সালের আন্দোলন গণতন্ত্রের পুনর্জয়ের প্রতীক, একে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে মেলানো যাবে না।’
উপস্থিত ছিলেন মির্জা নাজমুল ইসলাম কাজল, তৌহিদুল ইসলাম, শামসুজ্জামান বিপ্লব প্রমুখ।
ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিশাল বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টায় দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে বড়মাঠ চত্বরে এসে শেষ হয়।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মির্জা ফয়সাল আমিন বলেন, ‘১৭ বছরের দমন-পীড়নের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমরা নতুন দেশ ফিরে পেয়েছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আন্দোলনে বহু প্রাণ গেছে, আজ আমরা তাঁদের স্মরণ করছি।’
মিছিলে জেলা, উপজেলা, পৌর বিএনপি, কৃষকদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
পটুয়াখালী : পটুয়াখালীতে আয়োজিত বিজয় শোভাযাত্রায় বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অন্যায়-অত্যাচার করে কেউ টিকে থাকতে পারে না। হাসিনা পালিয়ে গেছেন, কিন্তু আমাদের পালানোর সুযোগ নেই।’
ঝাউতলা এলাকা থেকে শুরু হয়ে লঞ্চ টার্মিনাল পর্যন্ত বিজয় শোভাযাত্রাটি চলে। মিছিলের নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্টি ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান টোটন।
বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ জানে, বেহেশতের টিকিট বিক্রি করে কেউ রেহাই পায় না। ধর্মের অপব্যবহার করে নির্বাচন নস্যাৎ করতে দেওয়া হবে না।’
পাবনা : পাবনায় অনুষ্ঠিত বিজয় র্যালিতে অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব।
দলীয় কার্যালয় থেকে বের হওয়া র্যালিটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর আগে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে দলীয় কার্যালয়ে সমবেত হয়।
উপস্থিত ছিলেন আব্দুস সামাদ খান মন্টু, আনিসুল হক বাবু, নুর মোহাম্মদ মাসুম, এ্যাড. মাকসুদুর রহমান মাসুদ প্রমুখ।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আনন্দ মিছিল করেছে জেলা বিএনপি। জেলা কার্যালয় থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে চুয়াডাঙ্গা স্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন অ্যাড. এমএ মজিদ, জাহিদুজ্জামান মনা, আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, সাজেদুর রহমান পপপু প্রমুখ। নেতারা বলেন, ‘বিএনপি গণমানুষের দল। স্বৈরাচারী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করে দ্রুত ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।’
চরফ্যাসন (ভোলা) : ভোলার চরফ্যাসনে যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের পক্ষে বিশাল বিজয় মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পৌরসভা ও উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল সভাস্থলে আসে। পরে সেটি জনসমাবেশে রূপ নেয়।
সভায় বক্তব্য দেন হেলাল উদ্দিন টিপু, কয়সর আহম্মদ কমল, গোফরান মহাজন, কাজী মঞ্জুর হোসেন, খায়রুল ইসলাম সোহেল, মমিনুল ইসলাম ভট্টু প্রমুখ।
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) : নান্দাইলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইয়াসের খান চৌধুরির নেতৃত্বে বিজয় র্যালি বের করা হয়। মাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে কানারামপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয় র্যালিটি।
সমাবেশে বক্তব্য দেন ইয়াসের খান চৌধুরি, মো. মিজানুর রহমান লিটন, এনামুল কাদির, এম. আলমগীর সরকার, কাজী আব্দুস সাত্তার, উসমান গুনি ভূইয়া গেনু, রফিকুজ্জামান মনির, লোকমান হোসেন, রেজাউল করিম, বাদল সরকার প্রমুখ।
ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা এতে অংশ নেন।
বরিশাল : বরিশালে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিজয় র্যালি করেছে বিএনপি। দুপুরে নগরীর সদর রোডে র্যালির আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আজকের বিজয় পেয়েছি। নির্বাচন ঘোষণা আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফল।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সেটাই সম্ভব হয়েছে।’
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাহী কমিটির মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, এবায়দুল হক চান ও আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতুল্লাহ।
সভাপতিত্ব করেন মহানগর আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার।
এআরএস