সেরা বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকট, পাঠদান চলছে অস্থায়ী টিনশেডে

তরিকুল ইসলাম, খুলনা
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৫৪

খুলনার কয়রা উপজেলার এস ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ন্যূনতম পাঠদানের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে অসংখ্য কৃতিত্ব অর্জন করলেও বর্তমান সংকট শিক্ষার মানে বাধা দিচ্ছে।
বিদ্যালয় থেকে এ পর্যন্ত ১২৯ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি অর্জনসহ জাতীয় পর্যায়ে ক্রীড়ায় সাফল্য পেয়েছে। বেশ কয়েক বছর উপজেলার সেরা বিদ্যালয় নির্বাচিত হয়েছে। অথচ পাঁচশ' শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র দুটি শ্রেণীকক্ষ। পাঠদান করাতে হচ্ছে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তৈরি অস্থায়ী টিনশেডে। দীর্ঘদিন ভবন পরিত্যক্ত। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একটি নতুন ভবনের অনুমোদন হলেও অদৃশ্য কারণে সেটি স্থগিত হয়ে যায়।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয় থেকে ১২৯ জন শিক্ষার্থী ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ কোটায় বৃত্তি লাভ করেন। ২০২২ সালের পরে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় মেধাবীদের বৃত্তি লাভের সুযোগ বন্ধ হয়। সর্বশেষ ওই বছর ছয়জন ট্যালেন্টপুল ও একজন সাধারণ কোটায় বৃত্তি অর্জন করেছে। ২০১৮ সালে ১০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় ফাতেমা নামের এক ছাত্রী জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালসহ বেশ কয়েকবার কয়রা উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কয়েকবার উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। চলতি বছরে উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক লাভ করেছেন বিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৪৯২ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদানের জন্য ১০ জন শিক্ষক রয়েছেন। বিদ্যালয়ে চরম শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে। শিক্ষার্থীর অনুপাতে রয়েছে শিক্ষক সংকট। বিদ্যালয়ের ছোট দুটি ভবনের একটি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত। অন্য ভবনের তিনটি কক্ষ ব্যবহারযোগ্য থাকলেও একটিতে রয়েছে অফিস। বাকি দুটি কক্ষে পাঠদান করানো হলেও সেখানে নেই কোন বেঞ্চ। প্রায় পাঁচশ’ শিক্ষার্থীর জন্য ব্যবহারযোগ্য কক্ষ মাত্র দুটি।
স্থানীয় জনগণের আর্থিক সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে একটি অস্থায়ী টিনশেড। পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ থেকে একটি টিনশেডের ঘর দেওয়া হয়েছে। সেখানে কোনরকমে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এর আগে খোলা আকাশের নিচেও ক্লাস নেওয়া হত। নেই পর্যাপ্ত বেঞ্চ। নেই ফ্যান। সামান্য বৃষ্টিতেই ভিজতে হয় শিক্ষার্থীদের। আবার গরমের সময় অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
দ্রুত স্থায়ী বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি নিরাপদ ও মানসম্মত পাঠদানের পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দা হাফেজ সাব্বির হোসেন জানান, বিদ্যালয়টিতে পাঠদানের পরিবেশ না থাকলেও শিক্ষকরা যথেষ্ট আন্তরিক। পড়াশোনার মান ভালো। এজন্য এখানে শিক্ষার্থীদের ভর্তির আগ্রহ অনেক বেশি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ৪৯২ শিক্ষার্থীর জন্য ১২ থেকে ১৪টি কক্ষ প্রয়োজন। কিন্তু আছে মাত্র দুটি। বাকি সব অস্থায়ী টিনশেড। বাচ্চাদের জন্য মনোরম পরিবেশ তৈরি করতে হলে অন্তত ৪-৫ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন দরকার।
তিনি আরও বলেন, একটি ভবনের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে আসছি। ভবনের অনুমোদন হওয়ার পরেও অজানা কারণে বাতিল হয়ে যায়। অতি দ্রুত একটি ভবন নির্মাণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত পরিবেশে পাঠদানের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান প্রধান শিক্ষক।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তপন কুমার জানান, গত অর্থবছরে একটি ভবনের বরাদ্দ হলেও কোনো কারণে তা বাতিল হয়। উপজেলা পরিষদের এডিপি খাত থেকে কিছু বরাদ্দ দিয়ে টিনশেড তৈরি করা হয়েছে। ভবন নির্মাণ এখন অত্যন্ত জরুরি।
এমবি