প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, গত নির্বাচনে যে সকল প্রিজাইডিং অফিসার সমস্যা তৈরি করেছে; তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন। তিনি বলেন, নির্বাচন সিস্টেমের ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষকে কেন্দ্র নিয়ে আসা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, এখনই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নয়। তফসিল ঘোষণার দুই মাস আগে তারিখ জানানো হবে। তবে স্বল্প সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।

শনিবার (৯ আগস্ট) সকালে রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা-উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশন, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও প্রশাসন মিলে যে একটা ভালো নির্বাচন করা সম্ভব এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। তাই আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করাটাই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কমিশনের হুঁশ থাকা পর্যন্ত সকল কার্যক্রম একেবারেই সোজা থাকবে। বিধিবিধান বা আইন কানুন ছাড়া এটা বাঁকা হবে না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। আমরা চাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নত হোক। যাতে করে শান্তিপূর্ণ ও নির্ভয়ে মানুষ তার পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারে। মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাওয়া ভুলে গেছে। নির্বাচনের দিন অনেক মানুষ ভোট দিতে কেন্দ্রে যায় না, বাসায় আরাম আয়েশ করে। অনেকেই মনে করে, ভোট দিতে গিয়ে কি হবে। কেউ না কেউ তো আমার ভোটটা দিয়ে দিবে। এ রকম মানসিকতা তৈরি হয়েছে। এ মানসিকতা দূর করাই নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছি। এজন্য সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। আর এ সচেতনতা তৈরীতে সাংবাদিকদের ভূমিকা রয়েছে। আমরা সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাই, পরামর্শ চাই।

এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, অস্ত্রের চেয়ে এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এআই এর ব্যবহার। এআই হচ্ছে বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার। এটা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি না। সাংবাদিকরা আমাদের পক্ষ। যারা প্রফেশনাল সাংবাদিক তারা আমাদের হয়ে কাজ করবেন। স্বচ্ছ ইলেকশনের জন্য কাজ করবে এ প্রত্যাশা আমাদের আছে। কিন্তু যারা ফেসবুক দিয়ে সাংবাদিকতা করে, যাদের কোনো ট্রেনিং নাই, কোনো দক্ষতা নেই, কোনো এথিকস নাই, তাদের নিয়ে আমাদের সমস্যা।

‘কেননা তারা প্রধান উপদেষ্টা ও আমাকে নিয়ে নানা ধরনের ভিডিও বানিয়ে একটা লিখে দিয়ে ছেড়ে দেয়। অনেক মানুষ এসব বোঝে না। রাতে শুয়ে শুয়ে এসব ভিডিও দেখে। এগুলো কেউ যাচাই-বাছাই করে না। আর্টিফিশিয়াল ভিডিও দেখে আর আমাদের ভুল বোঝে। তাই সবার কাছে অনুরোধ এগুলো যাচাই-বাছাই ছাড়া কেউ শেয়ার করবেন না। এ বিষয়ে সাংবাদিক ভাইদের সহযোগিতা দরকার। কেননা এটা আমাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বন্ধে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমাদের পক্ষ থেকে আমরা নিচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, অতীতে যে সব প্রিজাইডিং ও প্রশাসনের লোকজন নির্বাচনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদেরকে আগামী নির্বাচনে না রাখার চেষ্টা চলছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনে কারো পক্ষে ও বিপক্ষে কাজ করবে না, ১৮ কোটি মানুষের হয়ে কাজ করবে। এসময় এআই এর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষকে বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে। এটা মোকাবেলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এসময় নাগরিকদের উদ্দেশ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোট দেওয়া যেমন নাগরিক দায়িত্ব; তেমন ঈমানি দায়িত্বও বটে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা ফেরানো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার অভ্যাস নষ্ট হয়ে গেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার বেড়েছে। সবকিছু মোকাবেলা করা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। 

ব্রিফিং শেষে নির্বাচন কর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। পরে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা করার কথা রয়েছে তার। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুন্দর ভাবে পরিচালনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

এমবি