‘গাজীপুর স্টাইলে’ মতো ফেনীতে ৫ সাংবাদিকের ওপর হামলার পরিকল্পনা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের

ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১১:২২

‘গাজীপুরের স্টাইলে’ ফেনী জেলার পাঁচজন সাংবাদিককে লক্ষ্য করে আচমকা হামলার পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্যদের পরিচালিত একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের বিরুদ্ধে। গোয়েন্দা তৎপরতায় পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
শনিবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় বাসস-এর ফেনী সংবাদদাতা ও দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ফেনী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ‘একতাই শক্তি’ নামে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ফেনীর ৫ সাংবাদিককে টার্গেট করা হয়েছে। এদের মধ্যে মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ছাড়াও যমুনা টিভির স্টাফ রিপোর্টার আরিফুর রহমান, দৈনিক ফেনীর সময়-এর প্রধান প্রতিবেদক আরিফ আজম, এখন টিভি প্রতিনিধি সোলায়মান হাজারী ডালিম ও এনটিভি অনলাইন রিপোর্টার জাহিদুল আলম রাজন রয়েছেন।
সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়, শুক্রবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাতে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি যে, ‘একতাই শক্তি’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কতিপয় ব্যক্তি কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছে। ওই গ্রুপে সাইফ উদ্দিন লিখেছেন, ‘আমাদের উচিত গাজীপুরের মতো মিডিয়ার ট্রায়ালটার চান্স নেওয়া। এই চান্সে আমাদের ফেনীর সময়-এর শাহাদাত, আরিফ আজম, আরিফ, রাজন— এদের যে কারোর বিরুদ্ধে চান্সটা নেওয়া দরকার। এখন বিএসএল নিয়ে আসবে না, সব বিএনপির ওপর যাবে।’
সাহেদ অভি নামে অপর একজন লিখেছেন, ‘এই আরিফ আজম ও শাহাদাত হোসেনদের পা চাটতো আমাদের নেতারা। এই আরিফ আজম আমাদের ফেনী কলেজের সামনে নোবেলদের মিছিলের ছবি প্রকাশ করেছে। সবাইকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করছে। তার ও সম্পাদক শাহাদাতের ১০ বছর পরে হলেও ছাড় নেই। মাটির যত নিচে থাকুক তুলে নিয়ে আসবো। তার সঙ্গে এনটিভির রাজন, যমুনা টিভির আরিফ—এদের সবকটিকে দেখবো।’
নিষিদ্ধ ঘোষিত পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাহেদ আকবর অভি তার সঙ্গে সাইফ উদ্দিন মানিক, ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আবুল হাসনাত তুষার, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার রনি, সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ অপু, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূর করিম জাবেদ, সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাবিব শাকিল, সহসভাপতি শওকত কিরন, মো. হাসান, কাজী নিজাম উদ্দিন শুভ, ফেনী পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তপু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ আরও ২০-২৫ জন এ গ্রুপে আলোচনা করেছেন।
‘গাজীপুর স্টাইলে আচমকা কোথাও কোপাই দিতে চায়’— এমন আলোচনা চলছে হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপটিতে। এমনকি উল্লিখিত সাংবাদিকদের বাড়ি-ঘরে রাতের আঁধারে অগ্নিকাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনাও করেছেন তারা।
এ গ্রুপে অ্যাডমিনরা হলেন- জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তপু, সাধারণ সম্পাদক নূর করিম জাবেদ, সহসভাপতি সাহেদ আকবর অভি, আশিক হায়দার রাজন হাজারী, রনি চন্দ্র দাস, পৌর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত তুষার, কলেজ ছাত্রলীগের সাইফ উদ্দিন মানিক।
গ্রুপে অন্যান্যদের মধ্যে শওকত কিরন, জিমান শুভ, এ এইচ তুষার, জোবায়েদ আকাশ, তৌফিক চৌধুরী, হৃদয় ভূঁঞা, আকাশ আহমেদ, মো. রাকিব, দিলারা সুলতানা মিলা, নিজাম পাটোয়ারী, নাছির উদ্দিন মিয়াজী, ইকবাল হোসেন বাবলু, লিও চৌধুরী, মো. রোমান, রবিউল হক ভূঁঞা রবিন, এখলাছ উদ্দিন খন্দকার, রাকিব অর্ণব, ইয়াছিন আরাফাত রাজু, রায়হান হাবিব খান শাকিল, রাকিব আহমেদ তাহান, মামুন আড্ডা, মো. রিয়াদ হোসেন রিয়াদের নাম জানা গেছে।
ফেনী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি তারা গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে আগেই জেনেছেন। উল্লেখিত সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যসমূহ সাইবার সেলের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের প্রায় সবাই ফেনীতে হত্যা’সহ বিভিন্ন মামলায় পলাতক আসামি।
ফেনীর প্রবীণ সাংবাদিক একেএম আবদুর রহীম বলেন, হামলার পরিকল্পনা ফাঁসের পর জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের ধরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ফেনী জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ হোসেন এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ফেনীর গণহত্যায় জড়িতরা পলাতক অবস্থায় থেকে নানারকম নাশকতার পরিকল্পনা করছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার এ ভয়াবহ পরিকল্পনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সংশ্লিষ্টদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
সাংবাদিক ইউনিয়ন ফেনীর সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত। গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। সেক্ষেত্রে সাংবাদিক যা দেখবে তা লিখনির মাধ্যমে জাতিকে জানাবে। যদি তাদেরকে টার্গেট করে হুমকি-ধমকি প্রদান করা হয়, তা গণমাধ্যম ও এ পেশার লোকজনের পেশাদারিত্বের ওপর হুমকি বলে মনে করি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের উচিত, অপরাধী যে-ই হোক তার বর্ণ-পরিচয় না জেনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। না হলে গণমাধ্যম হুমকির মুখে পতিত হবে, যা কারো জন্য সুফল বয়ে আনবে না।
এম. এমরান পাটোয়ারী/এমবি