পূর্বাচলে অবৈধ বালুর গদি, সড়কে ধস ও জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ২০:৫৬
-6898b32ee265e.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
রাজধানীর পার্শ্ববর্তী রাজউকের ‘পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প’ এলাকার অন্তত তিনটি সেক্টরে রাজউকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রভাবশালী মহল অবৈধ বালুর গদি গড়ে তুলেছে।
এর ফলে সড়ক ধসে খানাখন্দ সৃষ্টি হচ্ছে, ড্রেন ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়রা দ্রুত এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
গত এপ্রিলের শেষ দিকে এসব অবৈধ বালুর গদি সরাতে রাজউক নোটিশ জারি করলেও ব্যবসায়ীরা তা মানেননি। তারা দাবি করছেন, তারা কোনো অবৈধ কাজ করেননি।
সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্বাচল নতুন শহরের পশ্চিম প্রান্তে বালুনদীর পাড়ে ১৩ ও ১৪ নম্বর এবং পূর্ব প্রান্তে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ৪ নম্বর সেক্টরের খালি জায়গায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে ব্যবসা করছে।
বালু উত্তোলনের কারণে সড়কে পানি ও বালুর ছড়াছড়ি কৃত্রিম জলাবদ্ধতা তৈরি করেছে। বালু ও পাথরবোঝাই ট্রাকের চলাচলে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে কয়লা ও বালুর ব্যবসা চলে আসছিল। ২০২২ সালে রাজউক অভিযান চালিয়ে তা উচ্ছেদ করা হলেও গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কিছু নেতা আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে মিলিত হয়ে ফের দখল নিয়ে ১৭টি অবৈধ বালুর গদি গড়ে তোলে।
গত ২৮ এপ্রিল রাজউক এসব বালুর গদি অপসারণে উপজেলা প্রশাসনকে লিখিত চিঠি দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ব্যবসায়ীদের মৌখিকভাবে নিজ দায়িত্বে বালু সরানোর কথা বললেও তারা তা উপেক্ষা করেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধ বালুর গদির কারণে সড়ক নষ্টসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। রাজউকের চিঠি পাওয়ার পর আগামী সপ্তাহেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’
রাজউক নতুন শহর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম জানান, পূর্বাচলে কিছু ব্যক্তি অবৈধভাবে বালু ব্যবসা করছেন। আমরা পুলিশ ও প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।
পিতলগঞ্জ ব্রাহ্মণখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীনা রানী ভৌমিক বলেন, বৃষ্টির সময় বালুর গদি থেকে আসা পানি রাস্তায় জমে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষাকার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে রাজধানী ঢাকার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ‘পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়। ভূমি উন্নয়ন, সড়ক, ড্রেন, ফুটপাত নির্মাণ এবং নদীতীর সংরক্ষণসহ প্রধান অবকাঠামো কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে লেক ও সেতুর কিছু কাজ চলছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অবৈধ বালু ব্যবসা অব্যাহত থাকলে পূর্বাচলের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পাবে। তারা অবিলম্বে ব্যবসা বন্ধে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
এন বি আকাশ/এআরএস