Logo

সারাদেশ

নারায়ণগঞ্জ বিসিকে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি

Icon

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৫৬

নারায়ণগঞ্জ বিসিকে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি

ছবি : বাংলাদেশের খবর

শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টস ও তাঁত শ্রমিকরা বর্তমানে চরম অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। সূতার দাম বৃদ্ধি এবং লোডশেডিংয়ের কারণে আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ের একের পর এক পাওয়ারলুম কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে তিন উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার পাওয়ারলুম শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। কারখানা মালিকরা ব্যাংক ঋণের বোঝা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন।

নারায়ণগঞ্জ শহরের বিসিক শিল্প এলাকার অবস্থাও করুণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি এবং কার্যাদেশ কমে যাওয়ার কারণে একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি মোরশেদ সারোয়ার সোহেল আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ না এলে ভবিষ্যতে আরও কারখানা বন্ধ হবে।

তিনি জানান, কয়েকটি কারখানা আগে থেকেই দুর্বল অবস্থায় ছিল। বিগত সরকারের আমল থেকেই ফ্যাক্টরিগুলো আর্থিক সংকটে পড়েছিল। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবই মূলত বন্ধ হওয়ার কারণ। গত এক বছরে নারায়ণগঞ্জের ১৯টি কারখানা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি আরও কয়েকটি কারখানা লে-অফ করা হয়েছে।

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে ছোট-বড় এক হাজার ৮৩৪টি পোশাক কারখানা রয়েছে। সূত্র জানায়, এক বছরে ২৬টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। এতে পাঁচ হাজার ৩৪২ জন শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বন্ধ কারখানার মধ্যে রয়েছে নিট গার্ডেন, একে ফ্যাশন লিমিটেড, লা মেইজন কচুর লিমিটেড, মোল্লা নিট ফ্যাশনসহ অন্তত আটটি বড় প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে বেশির ভাগই আর্থিক সংকট এবং পর্যাপ্ত কাজের অভাবের কারণে বন্ধ হয়েছে।

নিট গার্ডেনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুল হোসেন বলেন, ‘প্রায় সাড়ে চারশ শ্রমিক কাজ করত। দৈনিক ১০ হাজারের বেশি পোশাক তৈরি হতো। আর টাকার দিক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার মার্কিন ডলারের সমমূল্যের পোশাক। ঋণ খেলাপের কারণে আমাদের কারখানা বন্ধ হয়েছে, তবে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।’

এএসটি গার্মেন্টসের মালিক মো. আতিকুর রহমান জানান, কার্যাদেশ কমে যাওয়ায় এবং আর্থিক সংকটের কারণে কারখানা বন্ধ করতে হয়েছে।

ভর্তুকি দিয়ে কয়েক মাস পরিচালনা করা হয়েছিল। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি এম. এ. শাহীন বলেন, বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা এখন অটোরিকশা চালাচ্ছেন বা গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেছেন।

অপরদিকে, নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (দুই) এর ভুলতা গ্রিডের অর্ধেকের বেশি যন্ত্রপাতির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আড়াইহাজার উপজেলায় দিনে ৬ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে কলকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, সাধারণ মানুষ প্রচন্ড গরমে ও গরমজনিত জ্বরে ভুগছে।

আড়াইহাজার মূলত শিল্প প্রধান এলাকা। এখানে বড়-বড় পাওয়ারলুম কারখানা, বাজার ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান। লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, ফলে লোকজন আর্থিক সমস্যায় পড়ছেন।

নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (দুই)-এর আড়াইহাজার জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার টি এম মেজবাহউদ্দিন জানান, দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা দুই শত মেগাওয়াট, কিন্তু যন্ত্রপাতি কাজ না করার কারণে মাত্র ৯০-৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।

রূপগঞ্জ উপজেলায় টানা বর্ষণ, প্রচন্ড গরম এবং লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্প কলকারখানার উৎপাদন ও জনজীবন বিপর্যস্ত। এখানে ছোট-বড় প্রায় আড়াই হাজার শিল্প-কারখানা রয়েছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছেন।

শিল্প কারখানার মালিকরা জানিয়েছেন, জেনারেটর ও গ্যাস ব্যবহার করেও পুরো উৎপাদন নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। লোডশেডিং ও গরমের কারণে শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেন না। উৎপাদন কমে আসায় বেতন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও ঝুঁকির মধ্যে। তারা সরকারের কাছে দ্রুত সমস্যার সমাধান চেয়েছেন।

গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের আমলাব এলাকার জুনায়েত ফ্যাশন গার্মেন্টসের ম্যানেজার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাদের কারখানায় টি-শার্ট উৎপাদন হয়। দিনে অন্তত ১৫–২০ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। শ্রমিকরা কাজ করতে না পারলে বসে সময় কাটাচ্ছেন।’

কাঞ্চন এলাকার বিএম টেক্সটাইল লিমিটেডের মালিক হাজী খলিল সিকদার জানান, প্রচন্ড গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে চাদরের উৎপাদন অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। শ্রমিকরা কাজ না করে অলস সময় পার করছেন।

ভুলতা এলাকার ভাই ভাই এমব্রয়ডারি কারখানার মালিক আলিনুর ব্যাপারী বলেন, ‘একদিকে প্রচন্ড গরম, অন্যদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং। আমরা আর কুলিয়ে উঠতে পারছি না। সরকারের কাছে সমস্যার সমাধান চাই।’

বরপা এলাকার অন্তিম নিটিং ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং কারখানার কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎ সংকটের কারণে গ্যাস ও ডিজেল ব্যবহার করে উৎপাদন চালানো হচ্ছে। তবে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ও শ্রমিকদের কথা ভেবেই কারখানা চালু রাখা হচ্ছে।

এআরএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

পোশাক শ্রমিক পোশাক খাত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর