Logo

সারাদেশ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার আসামি পেলেন ‘সাহসী সাংবাদিক’ সম্মাননা, নিন্দার ঝড়

Icon

ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৮:৩১

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার আসামি পেলেন ‘সাহসী সাংবাদিক’ সম্মাননা, নিন্দার ঝড়

ছবি : সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শেখ ফয়েজ আহমেদ এবার পেলেন ‘সাহসী সাংবাদিক’ সম্মাননা। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ফরিদপুরে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

বুধবার (১৩ আগস্ট) শেখ ফয়েজ নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে জানান, সাংবাদিকতায় ২০২৪ সালে সাহসিকতাপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে তাকে সম্মাননা পত্র, ক্রেস্ট ও চেক দেওয়া হয়েছে।

এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর জেলার সাংবাদিক মহল ছাড়াও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। বুধবার দুপুরে জুলাই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী কয়েকজন বীরযোদ্ধা জেলার সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত প্রতিবাদ জানান। তারা বিতর্কিত এই সম্মাননা প্রত্যাহার এবং প্রকৃত সাহসী সাংবাদিকদের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি করেন।

ফরিদপুর প্রেসক্লাব এ ঘটনাকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের অবদানকে অবমূল্যায়ন বলে মন্তব্য করেছে।

জানা গেছে, শেখ ফয়েজ আহমেদ বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের ফরিদপুর জেলা কমিটির সভাপতি। তিনি বঙ্গবন্ধু সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিষদের ব্যানারে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও অংশ নেন। সাংবাদিকতার পরিচয় ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জেলার সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে ব্যাপক দুর্নীতির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছিল। পরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে তিনি রেহাই পান বলে অভিযোগ আছে।

তার বিরুদ্ধে ফরিদপুর সমবায় ব্যাংক ভবনের পাঁচটি দোকান কারসাজি করে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেন এবং আন্দোলনকারীদের বিভ্রান্ত করতে অনেককে ‘শিবির ট্যাগ’ দেন বলে অভিযোগ আছে।

গত বছরের ১০ অক্টোবর ফরিদপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় শেখ মুজাহিদুল ইসলাম কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে দায়ের হওয়া ওই মামলায় শেখ ফয়েজ আহমেদ ছিলেন এজাহারভুক্ত ৯৭ নম্বর আসামি।

তবে এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট ৩ আগস্ট রাজধানীর তথ্য ভবনের ডিএফপি অডিটোরিয়ামে ‘সাহসী সাংবাদিক’ হিসেবে সম্মাননা দেয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। সভাপতিত্ব করেন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ।

যোগাযোগ করা হলে মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। ফরিদপুর থেকে একমাত্র আবেদনকারী ছিলেন শেখ ফয়েজ, যাচাই-বাছাই না করায় এমনটি হয়েছে।

এদিকে জুলাই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের প্রতিনিধি দল এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন আবরার নাদিম ইতু, কাজী রিয়াজ, সোহেল রানা ও মাহমুদুল হাসান ওয়ালিদ।

জেলা সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, কিভাবে এই নামটি এলো, তা তাদের জানা নেই। জেলা পর্যায়ে কোনো মতামতও নেওয়া হয়নি। বিষয়টি তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব পিয়াল বলেন, এ ঘটনা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অবদান রাখা সাহসী সাংবাদিকদের প্রতি অসম্মান। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।

অপূর্ব অসীম/এআরএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হামলা ও ভাংচুর পুরস্কার

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর