Logo

সারাদেশ

লাশ দিবো দিবো, কিন্তু দিনতো পার হয়ে যাইতাছে : ভারতে গণপিটুনিতে নিহত যুবকের মা

Icon

শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২১:৩২

লাশ দিবো দিবো, কিন্তু দিনতো পার হয়ে যাইতাছে : ভারতে গণপিটুনিতে নিহত  যুবকের মা

ছেলের মরদেহের আশায় প্রহর গুনছেন মা ফুলেরা বেগম। ছবি : বাংলাদেশের খবর

অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের পর মেঘালয় রাজ্যের বাসিন্দাদের গণপিটুনিতে নিহত বাংলাদেশি যুবককে মরদেহ ফেরত পেতে প্রহর গুনছেন মা ফুলেরা বেগম, দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন পরিবারের সদস্যরা। সোমবার (১১ আগস্ট) বিকেলে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলস জেলার খনজয় কৈথাকোণা গ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

তবে ঘটনাটির কথা বুধবার (১৩ আগস্ট) আকরামের পরিবার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে। সেখানে বাড়িঘরে হামলা ও অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ তুলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। 

নিহত ওই যুবকের নাম আকরাম হোসেন (৩০)। সে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাঁকাকুড়া গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে। 

জানা গেছে, আকরাম হোসেনসহ আটজন বাংলাদেশি ব্যক্তি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অনুপ্রবেশ করেন। এ নিয়ে ইতোমধ্যে জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশ হয়েছে।

সরেজমিনে আকরাম হোসেনের গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তার মা ফুলেরা বেগম বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। সে ৪ বছর বয়সের মেয়েকে রেখে গেছেন দাদির কাছে। এখন পিতা হারা সন্তানকে নিয়ে দাদি দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ছেলের লাশের জন্য।  

ফুলেরা বেগম বলেন, ‘মানুষই অপরাধ করলে আইন আছে, বিচার-আদালত আছে। কিন্তু এইভাবে পুলাডারে পিডায়ে মাইরা ফেলাইছে। পোলার ছবি আর ভোটার আইডি নিয়ে বিজিবি ক্যাম্পে ঘুরেছি। তারা খালি কয়তাছে লাশ দিবো দিবো, কিন্তু দিনতো পার হয়ে যাইতাছে। আমার পুলাতো আইতাছে না। আমার পোলারে যে অপবাদ দিয়া মারছে এ কাজ আমার পোলা করতে পারে না। আমি আমার পোলার হত্যার বিচার চাই। তাড়াতাড়ি লাশ ফিরত চাই।’

ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, ৯ আগস্ট শনিবার মধ্যরাতে আকরামসহ আটজন বাংলাদেশি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসি হিলস জেলার রোংদাংগাই গ্রামে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেন। পরে ওই গ্রামের এক বাসিন্দাকে অপহরণের চেষ্টা এবং বাড়িঘরে হামলার অভিযোগে পাঁচ বাংলাদেশিকে আটক করে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন, বাংলাদেশি পুলিশ কনস্টেবল পরিচয়দানকারী জামালপুরের মারুফুর রহমান (৩২), জামালপুর সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম (২৫), নারায়ণগঞ্জের সায়েম হোসেন (৩০), কুমিল্লার মেহফুজ রহমান (৩৫) ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের মোবারক হোসেন (৩২)।

এদিকে গত সোমবার বিকেলে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার মহেশখোলা সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খনজয় কৈঠাকোনা গ্রামের একটি বন থেকে আকরামকে আটক করে পিটুনি দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে আহত অবস্থায় তাঁকে ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে তাঁকে স্থানীয় মহেশখোলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আকরাম।
এসব প্রতিবেদনে পুলিশ জানিয়েছে, আকরামসহ অন্যদের অনুপ্রবেশ ও অপহরণের চেষ্টার সন্দেহে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় এখনো স্থানীয় কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি। 

ভারতের খাসি হিলস জেলার পুলিশ সুপার বানরাপলাং জিরওয়া স্থানীয় বলেন, আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি রিভলভার, পরিচয়পত্র, তিনটি ওয়্যারলেস সেট ও একটি ম্যাগাজিন জব্দ করা হয়েছে। আটক বাংলাদেশিদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকরাম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঝিনাইগাতী উপজেলা কাংশা ইউনিয়ন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মুসা মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আকরাম শশুর বাড়ী থাকতো। কীভাবে কার কার সঙ্গে ভারতে গিয়েছেন তা আমরা জানিনা। তার স্বজনেরাও জানেন না বলে আমাকে জানিয়েছে। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমিসহ তার পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে গিয়েছিলাম লাশ ফেরত চাইতে।

আকরামের বড় ভাই শেখ ফরিদ বলেন, আকরামের স্ত্রী ফোনে যোগাযোগ করতে না পেরে আমাকে জানিয়েছিলো। পরে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রথম মৃত্যুর খবর পাই। সেই ছবি দেখে আমরা তাকে চিনতে পারি। তবে কীভাবে সে ভারতে গেল, সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। তার লাশ ফেরত আনার জন্য আমরা বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন খোঁজ খবর পাচ্ছিনা। তারা যা কাগজপত্র চেয়েছি তাই দিয়েছি। কিন্তু তারা কোন কিছু বলছে না।'

ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন ৩৯ বিজিবির আওতাধীন ঝিনাইগাতী উপজেলার নকশী বিওপির সুবেদার আব্দুল লতিফ বলেন, আমরা ইতোমধ্যে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি। আমাদের একটি টিম তার বাড়িতেও গিয়েছিলো। ঘটনার বিষয়ে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।'

এ বিষয়ে শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল-আমীন বলেন, ভারতে নিহত আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। ঘটনাটি শুনেছি। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা চলমান আছে।

  • শাহরিয়ার শাকির/এমআই
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর