নদীর চরে আশ্রয়ণ প্রকল্প, পানিবন্দি ২৫০ পরিবার

আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১১:০৬

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে স্বপ্ননগর আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে জলাবদ্ধতায় দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন এখানে বসবাসরত ২৫০ পরিবার। গত এক সপ্তাহ যাবত তারা পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বসবাস করছেন। বাধ্য হয়ে অনেকে ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ করেন, যে জায়গায় স্বপ্ননগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে গত ১৫ বছর পূর্বে মধুমতি নদীর পানি প্রবাহ ছিল। পরবর্তীতে সেখানে চর জেগে উঠেছে। সেই জেগে ওঠা চরের মধ্যেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৫০টি ঘর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫০টি ঘরকে কেন্দ্র করে উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চরকাতলাসুর গ্রামে ৩৩ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয় স্বপ্ননগর নামে একটি আবাসন এলাকা। যাদের জমি ও ঘর নেই- এমন পরিবারগুলোর ঠাঁই দেওয়া হয় এলাকাটিতে। তবে সরকার ঘোষিত উপহারের এ ঘরগুলো নিচু জায়গায় নির্মাণ করায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাওয়ার পাকা সড়কে কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও তার চেয়ে বেশি। প্রতিটি গলিতেও পানি প্রায় হাঁটু সমান। বেশির ভাগ ঘরের মেঝে ও রান্নাঘরে ঢুকে পড়েছে নোংরা পানি। পানিতে তলিয়ে গেছে টয়লেটের রিং। এতে নোংরা পানির দুর্গন্ধে অসহনীয় হয়ে পড়েছে পরিবেশ। ছোট শিশুরা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। সুপেয় পানির অভাব ও নোংরা পানির সংস্পর্শে ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। পাশাপাশি সাপ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব দেখা দিয়েছে।
পানিবন্দি হওয়ার কারণে দিন আনে দিন খাওয়া এখানের বাসিন্দারা বেকার হয়ে পড়েছেন। তিন বেলা খেতেও পারছেন না অনেকেই।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘মধুমতি নদীতে সাতবার বাড়ি ভাঙছে। পরে সরকার এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকার জন্য একটা ঘর দিয়েছে। কিন্তু এখানে এসেও চরম বিপাকে পড়েছি। ঘরের মধ্যে পানি। রান্নাঘর তলিয়ে গেছে। ঠিকমতো রান্নাবান্না করতে পারি না।’
আশ্রয়ণের ১৩৩ নাম্বার ঘরের মালিক সাবু মোল্যা প্রতিবেদককে বলেন, ‘বাবারে আমরা এখানকার সবাই এক সপ্তাহ ধরে পানির মধ্যে বসবাস করছি। কেউ কোনো সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেনি। পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বসবাস করছি।’
সেলিনা বেগম নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, ‘কয়েক দিন আগে একটি সাপ দেখতে পেয়ে ভয়ে সবাই আতঙ্কিত হয়ে যায়। সাপ, পোকামাকড়ের ভয়ে রাতে ঘুম হয় না।’
শিখা বেগম নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক নারী বলেন, ‘টয়লেটের ময়লার রিং পানিতে তলিয়ে গেছে। খুব অসুবিধা হচ্ছে। দুর্গন্ধে ঘরে থাকা যায় না। তাছাড়া রান্নার চুলা পানিতে তলিয়ে গেছে। ঠিকমতো রান্নাবান্না করতে পারছি না।’
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মীম খানম ও ফাতেমা খানম। তারা দু’জন চর কাতলাসুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে স্কুলে যাই। যাওয়ার সময় জামাকাপড়, বইখাতা ভিজে যায়।’
টুকু রানী নামে অপর এক নারী বলেন, ‘ঘরের সামনে ময়লা নোংরা পানি। রাস্তায় পানি। ময়লা পানিতে হেঁটে সন্তানদের পায়ে ঘা হয়েছে। অনেক দূর থেকে খাবার পানি আনতে হয়।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বিল্লাল মোল্যা বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা বসবাস করেন তারা খুব দরিদ্র মানুষ। তারা দিন আনে দিন খায়। তারা সকালে কাজে বের হয়, আর সন্ধ্যায় বাড়ি আসে। সারাদিন তারা বাইরে থাকেন। কিন্তু এখন তারা ঠিকমতো কাজকর্ম করতে পারছে না। তারা খুব কষ্টে জীবন-যাপন করছেন।’
গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান খান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকাটি উপজেলা প্রশাসনের নিকট জমা দেওয়া হবে।’
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলেন, ‘স্বপ্ননগর আশ্রয়ণ প্রকল্পে জলাবদ্ধতার বিষয়টি জেনেছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সহায়তা করার চেষ্টা করা হবে।’
এইচকে/এমবি