চাঁদপুরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁদপুর
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১৮:৫৫
---2025-08-18T184648-68a322bd1bcb6.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
‘অভয়াশ্রম গড়ে তুলি দেশি মাছে দেশ ভরি’ এই স্লোগানে সারাদেশের ন্যায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে চাঁদপুরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধন হয়েছে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়ক হয়ে সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে বেলুন উড়িয়ে মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধন করেন অতিথিরা। পরে সদর উপজেলা পরিষদ পুকুরে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা অবমুক্ত করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনসহ অতিথিরা।
এরপর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে এবং জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় আলোচনা সভা ও মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে বিভিন্ন অবদান রাখায় মৎস্য চাষিদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন-জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিপাদ্যের মধ্যে যে অভয়াশ্রম এর কথা বলা হয়েছে, তা হচ্ছে আমাদের প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা জলাশয়গুলোতে মাছ চাষ করা এবং মাছ চাষের জন্য নিরাপদ রাখা। নদী, খালসহ জলাশয়গুলো মাছ চাষের জন্য এখনো আমরা নিরাপদ করতে পারছি না। আজকে আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, অভয়াশ্রমগুলোকে আমরা যত্ন করব।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘চাঁদপুরে নির্ধারিত অভয়াশ্রম আছে। সেটি হচ্ছে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস পদ্মা-মেঘনায় জাটকা এবং অক্টোবর মাসে মা ইলিশ রক্ষা করবো। এই দুটি সময়ে চাঁদপুরের ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চলভৈরবী পর্যন্ত মা ইলিশ অন্যান্য প্রজাতির মাছ নিরাপদ থাকার সুযোগ করে দিতে হবে।’
তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনার সন্তান বেড়ে উঠার জন্য খাদ্য প্রয়োজন। খাদ্যের মধ্যে একটি রয়েছে আমিষ। আমিষ আমরা শাক সবজির মধ্যে পেলেও পরিমাণ খুবই কম। আমিষ সবচাইতে বেশি পাওয়া যা মাছের মধ্যে। যে কারণে আমাদেরকে ইলিশ ছাড়া দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদনে আরো উদ্যোগ ও আগ্রহ বাড়াতে হবে।
মৎস্য কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘শুধু নদীকেন্দ্রিক পরে থাকলে হবে না। যেসব পুকুরগুলো অব্যবহৃত রয়েছে সেসব পুকুরে মাছ চাষের জন্যে আপনাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বুঝাতে হবে। তাদেরকে পথ দেখাতে হবে। শিক্ষিত বেকার যুবকদের ধরনের মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এতে আপনাদের সম্মানও বৃদ্ধি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি অন্যায় করি আবার অন্যকে দোষারোপ করি, এইসব থেকে আমাদের বেরোতে হবে। ভোলা থেকে ডুবোচরের কারণে ইলিশ আসতে পারে না, এটা আমি বিশ্বাস করি না। মা ইলিশ নদীতে আসলে তাকে বাঁচতে দেন। যদি মা ইলিশকে বাঁচতে দেন তাহলে চাঁদপুরে ইলিশের প্রাচুর্য হয়ে যাবে। সামনে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান আসছে সেসময় মা ইলিশ রক্ষা করতে হবে।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সাংবাদিকরা প্রাণবন্ত চেষ্টা করছে মা ইলিশ রক্ষা করতে। তারা নিঃস্বার্থভাবে অভিযানের সময় কাজ করে যাচ্ছে। তারা সেসময় নিউজ করে এবং আমাদের অভিযানের তথ্য দেয়। তারা করছে অথচ আপনাদের দায়িত্ব সে দায়িত্ব পালন করছেন না। অন্যের দিকে আঙুল না তুলে নিজের দিকেও আঙুল তুলতে হবে।’
স্বাগত বক্তব্য দেন- জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান কবীর, সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুকের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ আব্দুর রকিব, নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মোশফিকুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাখাওয়াত জামিল সৈকত, চাঁদপুর মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ বাবুল কৃষ্ণ ওঝা।
পুরস্কার প্রাপ্ত মৎস্য চাষিরা হলেন-মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষি কচুয়া উপজেলার আকতার হোসেন, রুই জাতীয় মাছ উৎপাদনে সদরের জিএম ফারুক, মনোসেক্স তেলাপিয়া ও শিং মাগুর উৎপাদনে মতলব দক্ষিণ উপজেলার মো. মাইনুদ্দিন, কৈ মাছ উৎপাদনে হাজীগঞ্জ উপজেলা মো. হাবিবুর রহমান, কার্প ও মনোসেক্স তেলাপিয়া উৎপাদনে শাহরাস্তি উপজেলার মো. হুমায়ুন কবির, রুই জাতীয় মাছ উৎপাদনে মতলব উত্তর উপজেলার মো. মোশারফ হোসেন।
আলোচনা সভা শেষে সফল ছয় মৎস্যচাষীর হাতে পুরস্কার তুলেদেন প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিরা। অনুষ্ঠানে মৎস্যচাষি, জেলে, জেলে সংগঠনের নেতারাসহ সুধীজন অংশগ্রহণ করেন।
- আলআমিন ভূঁইয়া/এমআই