Logo

সারাদেশ

শাহরাস্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের গেজেটে ভুয়া নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ

Icon

আবু মুছা আল শিহাব, শাহরাস্তি (চাঁদপুর)

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ২১:২৩

শাহরাস্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের গেজেটে ভুয়া নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ আহতদের সরকারি গেজেটে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে আর্থিক সহায়তা নির্ধারণ করে। সেই তালিকায় শাহরাস্তির ২৮ জনের নাম উঠে আসে।

তবে সরেজমিন অনুসন্ধান ও আন্দোলনকারীদের বক্তব্যে দেখা যায়, তালিকায় অন্তর্ভুক্ত অনেকের নাম ও তথ্য বিতর্কিত। অভিযোগ উঠেছে, কেউ বন্ধ হাসপাতালের চিকিৎসা দেখিয়ে নাম তুলেছেন, কেউ পূর্বের মানসিক সমস্যাকে আন্দোলনে আহত দেখিয়েছেন। আবার কেউ নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী হয়েও ‘আহত জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

মো. রায়হান (গেজেট নং ৯৩৯) দাবি করেছেন, তিনি ৪ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে আহত হন এবং পরদিন শাহরাস্তির চিতোষী আইডিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। কিন্তু স্থানীয়দের মতে, উক্ত হাসপাতালটি সরকার পতনের দুই বছর আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

মো. ইউছুব আলী (গেজেট নং ৯২২) দাবি করেছেন, ৫ আগস্ট কালিয়াপাড়ায় বাঁশের আঘাতে গুরুতর আহত হন এবং জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে এক লাখ টাকার চেক পান। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ওইদিন কালিয়াপাড়ায় কোনো সংঘর্ষই ঘটেনি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গেজেটে অন্তর্ভুক্ত কয়েকজন আসলে ৫ আগস্ট সাবেক পৌর মেয়রের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তারা নিজেদের গণঅভ্যুত্থানে আহত দাবি করে সরকারি সহায়তা গ্রহণ করেছেন।

মো. কামরুল হাসান রাব্বি (গেজেট নং ৯২০) সিলেট সদর উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা; তিনি ছাত্রলীগের কর্মী এবং আন্দোলনের সময় আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তবু শাহরাস্তির তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

নাহিদুল ইসলাম রাতুল (গেজেট নং ১০৪৪) মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত বলে দাবি করেছেন, তবে সরেজমিনে জানা গেছে তিনি ছোটবেলা থেকেই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।

গেজেট নং ২০১৩-এর শাহজালালও ২ আগস্ট কাঁচ ভাঙার আঘাতে আহত হয়ে ৩ আগস্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বলে দাবি করেছেন, কিন্তু হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য প্রমাণিত হয়নি।

এসডিএফ (সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন) থেকে শাহরাস্তিতে ১১ জনকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নাজমুল হাসানের পরিবারকে ‘জুলাই আন্দোলনে নিহত’ দেখিয়ে দুই লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়, অথচ স্থানীয়দের মতে, নাজমুল গত ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে মারা গিয়েছেন। সহায়তা পাওয়া সকল ব্যক্তি ওই এনজিওর সদস্য ও সুবিধাভোগী। সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা পাওয়া যায়নি।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আব্দুল কাইয়ুম মাহিন বলেন, ‘গেজেটে যাদের নাম এসেছে তাদের অধিকাংশকে আমরা চিনি না। অনেকে ভুয়া তথ্য দিয়ে সরকারি সহায়তা নিয়েছে। প্রকৃত আহতদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

শাহরাস্তির উপজেলা নেতা আক্তার হোসেন শিহাব বলেন, ‘প্রকৃত আহতদের বাদ দিয়ে অচেনা নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রশাসনের উচিত ভুয়া তথ্যদাতাদের বাদ দেওয়া।’

মাহবুব আলম বলেন, ‘শাহরাস্তিতে বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটেনি, তবুও ২৮ জনকে আহত দেখানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত হওয়া জরুরি।’

সাবেক ছাত্রনেতা জুবায়ের আল নাহিয়ান বলেন, ‘ভুয়া তথ্য দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে।’

শাহরাস্তি প্রেস ক্লাব সভাপতি মঈনুল ইসলাম কাজল জানান, আন্দোলনের সময় তেমন বড় সংঘর্ষ হয়নি, অথচ অনেক নাম প্রকাশিত হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আকলিমা জাহান বলেন, ৫ আগস্ট হাসপাতালে ১৫ জন চিকিৎসা নেন, তবে সবাই হালকা আঘাতপ্রাপ্ত ছিলেন।

শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিয়া হোসেন বলেন, ‘ইতিমধ্যে পাঁচজনের নাম গেজেট থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শাহরাস্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তালিকা ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, ভুয়া নাম বাতিল করে প্রকৃত আহতদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এআরএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

গণঅভ্যুত্থান জুলাই অভ্যুত্থান আন্দোলন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর