টাঙ্গুয়ার হাওরে বিপন্ন দেশীয় মাছ, ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য

ধর্মপাশা-মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৫৮
---2025-08-20T155825-68a59c62349bc.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরে বৈদ্যুতিক শক ও চায়নাদুয়ারী জালের মাধ্যমে দেশীয় মাছ নিধন চলছে।
জানা গেছে, বৈদ্যুতিক শক ও নিষিদ্ধ চায়নাদুয়ারী জালের ব্যবহারে দেশীয় মাছের উৎপাদন কমে গেছে। পাশাপাশি শামুক-ঝিনুক, ব্যাঙ, সাপসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে এবং হাওরের জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস হচ্ছে।
হাওরপাড়ের হাতপাটন গ্রামের মৎস্যজীবী শংকর বর্মন বলেন, ‘দুই বছর ধরে হাওরে বৈদ্যুতিক যন্ত্র দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। শুধু মাছ নয়, পানির নিচের সব প্রাণী মারা যাচ্ছে। আমাদের জালে এখন আর আগের মতো মাছ ওঠে না। অনেকেই পেশা ছেড়ে কৃষিকাজ বা শহরে চলে যাচ্ছে।’
জানা গেছে, হাওরাঞ্চলে শতাধিক ব্যক্তি বৈদ্যুতিক শকের মাধ্যমে মাছ শিকারে জড়িত। নদী ও খালে বড় ব্যাটারিতে সংযুক্ত ইনভার্টার ও বিদ্যুতায়িত জাল ব্যবহার করে একসঙ্গে ২০-৪০ ফুট ব্যাসার্ধের সব জলজ প্রাণী মেরে ফেলা হচ্ছে। রাতে গোপনে এসব কাজ চলে। ছোট ব্যাটারিতেও ৫-৭ ফুট এলাকা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।
চায়নাদুয়ারী জালেও ধরা পড়ছে মাছের পোনা, ডিম, শামুক-ঝিনুক এবং জলজ উদ্ভিদ। ফলে শুধু মাছ নয়, হাওরের স্বাভাবিক প্রজনন চক্রও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরেজমিনে উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর, শালদিঘা, ঘাসী নদী, রূপেশ্বর, সোমেশ্বরী নদী, বোয়ালার হাওরসহ বহু হাওর ও খালে চায়নাদুয়ারী জালে অবৈধভাবে মাছ শিকারের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
প্রবীণ জেলে জয়চরণ বিশ্বাস বলেন, ‘চায়নাদুয়ারী জাল ও বৈদ্যুতিক শকের কারণে পোনা ও ডিম শেষ হয়ে গেছে। সাধারণ জালে দিনে ৩০০ টাকার মাছও উঠে না। এভাবে চলতে থাকলে হাওরে আর কোনো মাছ থাকবে না।’
প্রশাসন মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে চায়নাদুয়ারী জাল জব্দ ও ধ্বংস করলেও বৈদ্যুতিক শকের মূলচক্র এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্থানীয়রা বলছেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অবিলম্বে বৈদ্যুতিক শক ও চায়নাদুয়ারী জালের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে কঠোর আইন প্রয়োগ না করলে অচিরেই এই জাতীয় সম্পদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
মধ্যনগর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ধর্মপাশার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘রাতে গোপনে এসব কাজ হওয়ায় ধরা যাচ্ছে না। তবে শনাক্তে তৎপরতা চালানো হচ্ছে।’
এ বিষয়ে মধ্যনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল রায় বলেন, ‘অবৈধ উপকরণ জব্দে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। বৈদ্যুতিক শকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
- মোহাম্মদ ইমাম হোসেন/এমআই