Logo

সারাদেশ

নড়াইলে যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

Icon

নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৫, ১৬:০৮

নড়াইলে যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

ছবি : বাংলাদেশের খবর

নড়াইলে মাছ চাষের ঘেরে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের জন্যও বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। চিকিৎসকেরা সতর্ক করে বলছেন, এসব মাছ খেলে মানুষের নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মৎস্য চাষে সম্ভাবনাময় জেলা নড়াইল। জেলার প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ সরাসরি ঘের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। মাছ রোগে আক্রান্ত হলে অধিকাংশ চাষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না নিয়ে স্থানীয় বাজার থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে ব্যবহার করছেন। সাময়িকভাবে মাছের রোগ দমন হলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা এবং ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন।

কোড়গ্রামের মাছ চাষি দীপক রায় প্রায় ত্রিশ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে যুক্ত। এ বছর তিনি একশ বিঘা জমিতে মাছ চাষ করছেন। দীপক রায় বলেন, “মাছে রোগ হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে দোকান থেকে ওষুধ কিনে ব্যবহার করি। মাঝে মাঝে উপকার মিললেও অনেক সময় ক্ষতি হয়।”

চাষিদের অভিযোগ, জেলার তিনটি উপজেলায় অন্তত অর্ধ শতাধিক বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক সহজেই পাওয়া যায়। মাছের খাবারের দোকানেই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে এসব ওষুধ। প্রকাশ্যেই ঘের মালিকেরা মাছের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করছেন এগুলো।

চিকিৎসকেরা সতর্ক করে বলছেন, অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া মাছ খেলে মানুষের চর্মরোগ, আমাশয়, অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবর্তী নারীরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। একই সঙ্গে ঘেরে এভাবে ওষুধ ব্যবহারের কারণে নদী, খাল ও বিলের পানি দূষিত হচ্ছে।

২০২২ সালে আন্তর্জাতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৭৭ শতাংশ মাছ চাষি রোগ নির্ণয় বা সঠিক ডোজ না জেনেই বাজার থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে ব্যবহার করেন। এতে মাছের শরীরে ওষুধের অবশিষ্টাংশ থেকে যায়, যা ভোক্তাদের শরীরে প্রবেশ করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা (রেজিস্ট্যান্স) বৃদ্ধি করে। ফলে সাধারণ রোগের চিকিৎসাতেও ওষুধ অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।

নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আজকাল মাছের পুকুরে যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি মাছের জন্য ক্ষতিকর। এই মাছ যখন আমরা খাই, তখন মানুষের দেহেও ক্ষতি হয়। মাছের ভেতরে কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা খুবই উপকারী। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে এই ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়ে যায়। ফ্যাটযুক্ত মাছের ফ্যাটে অ্যান্টিবায়োটিক জমা হয়। মানুষ এসব মাছ খেলে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি যেমন অ্যালার্জি, ঘা, ফুসকা ইত্যাদিতে আক্রান্ত হতে পারে।’

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বদরুজ্জামান বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে চাষিরা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করতে পারবেন। বর্তমানে আমরা চাষিদের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার থেকে নিরুৎসাহিত করছি।’

  • কৃপা বিশ্বাস/এমআই
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর