ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যু, ডাক্তারসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৫৭
---2025-08-20T195622-68a5d46194d8e.jpg)
নিহত রাতুল (১৩)। ছবি : বাংলাদেশের খবর
ঢাকার সাভারে টনসিলের অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় নিহত রাতুলের বাবা বাদী হয়ে ডাক্তারসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার পর থেকে আসামিরা পলাতক রয়েছেন।
বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেলে সাভার মডেল থানায় মামলা করেন রাতুলের বাবা জাহিদুর রহমান (৪২)।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুয়েল মিঞা।
এর আগে, গত ১৮ আগস্ট সাভারের স্পেশালাইজড হাসপাতালে রাতুলের টনসিলের অপারেশন হলে চিকিৎসা অবহেলায় তার মৃত্যু হয়।
মৃত রাতুল (১৩) মানিকগঞ্জ জেলা সদরের কসবা এলাকার জাহিদুর রহমানের ছেলে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শামীম আহম্মেদ ওই হাসপাতালে নিয়ে রাতুলের অপারেশন করান।
মামলার আসামিরা হলেন- ডাক্তার আসিফ আল মেহেদী ওরফে অনিক (ইএনটি) (৪৫), ডাক্তার শাজাহান (৪৫) (এনেস্থিসিয়া), মানিকগঞ্জ জেলা সদরের চান্দিরচর এরাকান তমেজ মুহরির ছেলে ও সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ শামীম আহম্মেদ (৫২), মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানার মজলিসপুর গ্রামের শহীদ মফিজ উদ্দিনের ছেলে ও হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ মো. বাবুল (৬৫), হাসপাতাল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ আসাদ (৪৫) সহ অজ্ঞাত নামা ডাক্তার ও নার্সরা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিবাদী শামীম ভুক্তভোগী পরিবারের পূর্ব পরিচিত হওয়ায় ছেলের সমস্যার কথা খুলে বলেন বাবা জাহাঙ্গীর। তিনি ছেলের চিকিৎসার জন্য সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিতে বলেন। তার কথা অনুযায়ী গত ১৮ আগস্ট ছেলে রাতুলকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। দুপুর আড়াইটার দিকে দায়িত্ব থাকা লোকজনদের সাথে কথা বলে ডাক্তারের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে বলেন শামীম। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপারেশন করতে হবে বলে জানায়।
রাতুলের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ছেলের পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর আমার ছেলের রিপোর্ট আমাকে দেয়নি। ডাক্তার ঠিকমতো রিপোর্ট দেখছে কিনা সেটাও জানায়নি। আমাকে কিছুই না জানিয়ে শামীম আহম্মেদ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার রুমে আমার ছেলেকে নিয়ে যায়। রাত ১১ টার দিকে আমার ছেলেকে অজ্ঞান অবস্থায় অপারেশন থিয়েটার থেকে কেবিনে নিয়ে গিয়ে অক্সিজেন লাগায়। কিছুক্ষণ পর ছেলের নাক দিয়ে রক্ত আসে। আমার ছেলের অক্সিজেন সরবরাহও বন্ধ ছিল। এসময় হাসপাতালের স্টাফদের বারবার বলার পরও তারা আমার ছেলের কাছে আসে নাই। আমার ছেলের অক্সিজেন বন্ধ থাকায় আমরা পুনরায় ডাক্তার নার্সদের ডাকাডাকি করলে কেউ আসেনি। অনেকক্ষণ পর আমার ছেলেকে পুনরায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শামীম আমাকে বলে আমার ছেলেকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।পরে সমস্ত টেস্টের কাগজ নিয়ে এনাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে টেস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে জানতে পারি, আমার ছেলের ইসিজি রিপোর্টে (ইনকম্পিলিট রাইট বান্ডেল ব্রাঞ্চ ব্লক) আছে। এই অবস্থায় রোগীকে কোন অবস্থায় অপারেশন করানো যাবেনা এবং কার্ডিওলজি স্পেশালিস্ট ডাক্তারের কাছে রেফার করতে হবে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ওই হাসপাতালে রোগীকে অপারেশন করার পর আইসিইউ না থাকায় সরাসরি কেবিনে হস্তান্তর করা হয়। আমরা মৃত ছেলেকে নিয়ে সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতালে গেলে অবহেলার কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এছাড়া আমার ও আমার স্ত্রীর উপর অতর্কিত হামলা করে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতালে বিবাদীরা পরস্পর যোগসাজশে চিকিৎসায় অবহেলা করে আমার ছেলের মৃত্যু ঘটায়।
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিয়া বলেন, ‘হাসপাতালে অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
- আরিফুল ইসলাম সাব্বির/এমআই