প্রতিপক্ষের হামলায় পুরুষশূন্য গ্রাম, আতঙ্কে নারী-শিশু

নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৪৫
---2025-08-21T191448-68a722f008615.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
প্রতিপক্ষের হামলা ও হুমকির মুখে নড়াইল সদরের চর শালিখা গ্রামে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নারী ও শিশুরা। কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
পুরুষশূন্য হয়ে পড়া পরিবারগুলো চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। হামলা ও হুমকি দেওয়ার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এতে প্রতিপক্ষ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
জানা গেছে, গত দুই মাস আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে দক্ষিণ পাড়ার আজিজার শেখ সমর্থকরা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। চলতি মাসে পুলিশ, রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলের মধ্যস্থতায় আপোষ-মীমাংসার পর তারা গ্রামে ফেরেন। তবে এরই মধ্যে মশিয়ার শেখ গ্রুপের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। গত ১৫ আগস্ট সদরের সীতারামপুর ব্রিজের ওপর মশিয়ার গ্রুপের মুরাদ শেখকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এর পরদিন মশিয়ার গ্রুপের সদস্য মুরাদের উপর হামলার সূত্র ধরে মশিয়ার নবীর গ্রুপের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষে আজিজার গ্রুপের সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। তারা বাড়ি ও ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। পাল্টা-আক্রমণে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নারীসহ ৩০ জন আহত হয়।
পরবর্তীতে মারামারির ঘটনায় নড়াইল সদর থানায় মামলা হলে গ্রেফতার আতঙ্কে গ্রাম ছাড়া হয়ে যায় আজিজার শেখের সমর্থকরা। এই সুযোগে মশিয়ার গ্রুপের লোকজন প্রতিপক্ষের কমলা বেগম, তরিকুল ইসলাম, আলী মিয়া, সিহাব, চান মিয়া, চিলু, বিলু, মিরফুল, উজ্জল, সোহেল, শামিম, রাসেল, রবিউল, আক্তার, জসিম, রুবায়েলসহ ১৬টি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন আজিজার শেখের সমর্থকের পরিবারের নারী সদস্যরা।
বুধবার (২০ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের একাধিক দোকান ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। একটি দোকানের টিনের বেড়া চৌচির হয়ে আছে, ভেতরে ভাঙা ফ্রিজ, টিভি ও আলমারি এলোমেলো পড়ে আছে। রান্নাঘরের হাড়ি-পাতিলও রক্ষা পায়নি।
চর শালিখা গ্রামের জসিমের স্ত্রী রিয়া বেগম বলেন, ‘পরিবারের পুরুষ সদস্যরা হাটবাজারে ছিল। তারা ঘরের ভিতর ঢুকে যা নিতে পারত তা নিয়েছে। টাকা-পয়সা যা ছিল তা নিয়ে গেছে আর ভাঙচুর করে রেখে গেছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকার কোন পরিবেশ নেই। রাত হলে তো বাড়িতে থাকা যায় না। দিনের বেলায় একটু ঘুরে বেড়াই, রাত হলে এখান থেকে সেখানে পালাই। এই গ্রামে থাকার আর কোনো পরিবেশ নেই।’
ক্ষতিগ্রস্ত রোকেয়া বেগম জানান, ‘মশিয়ার গ্রুপ এক হয়ে এসে আমার ছেলের দোকান ভাঙচুর করেছে। আমার ছেলে এক জন নিরপেক্ষ। তার দোকানে পাঁচ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সব কিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে। আমার একটা জা ছিল। সে ঠেকাতে গিয়েছিল, তাকে কুপিয়ে কেটে ফেলেছে। আমাদের বংশের কারো কিছু হয়নি। আমাদের রাস্তা-ঘাটে ওঠতে দিচ্ছে না। প্রতিপক্ষের লোকজন সব সময় রাস্তায় থাকে। আমাদের বাধা দিয়ে রাখছে।’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মশিয়ার শেখের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তার ভাতিজা মেহেদি ফোন রিসিভ করে বলেন, ‘দুই পক্ষের মারামারির ঘটনায় দুই পক্ষ মামলা করেছেন। প্রতিপক্ষের লোক নিজেদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে মশিয়ার চাচার লোকদের ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে।’
নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘চর শালিখা গ্রামের হামলার ঘটনায় দুই পক্ষ দুইটি মামলা করেছেন। তবে বাড়িঘর ভাঙচুরের বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
- কৃপা বিশ্বাস/এমআই