Logo

সারাদেশ

দুর্ঘটনার হটস্পট ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে!

Icon

আবু সাঈদ, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৫, ০৮:২৭

দুর্ঘটনার হটস্পট ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে!

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার। পদ্মা সেতুর সাথে যুক্ত এই আধুনিক মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন ছুটে যায়। রাজধানী থেকে ২১ জেলার মানুষের যাতায়াতের প্রধান রুট হিসেবে এটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এখন আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ২১ আগস্ট পর্যন্ত মাত্র তিন বছরে এ এক্সপ্রেসওয়েতে ঘটেছে ১ হাজার ৩০২টি সড়ক দুর্ঘটনা। এতে প্রাণ গেছে ১৮০ জনের, আর আহত হয়েছেন ১ হাজার ৯৮৫ জন।

জুলাই-আগস্টেই বেড়েছে দুর্ঘটনা
২০২৫ সালের জুলাই মাসেই এক্সপ্রেসওয়েতে ঘটে ১৮টি দুর্ঘটনা। এতে আহত হয়েছেন ২১ জন পুরুষ, নিহত হয়েছেন ৩ জন পুরুষ। একই মাসে ৪টি গাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে।

এদিকে আগস্টের ২১ তারিখ পর্যন্ত ঘটে ১২টি দুর্ঘটনা। এতে আহত হয়েছেন ১৯ জন— এর মধ্যে ১৫ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী। নিহত হয়েছেন ৭ জন— এর মধ্যে ৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী।

সর্বশেষ ভয়াবহ দুর্ঘটনা 
সবচেয়ে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাটি ঘটে ২১ আগস্ট ভোরে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর যাত্রীছাউনির কাছে। সকাল ৬টার দিকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি প্রাইভেটকার উল্টে যায়। ঘটনাস্থলেই নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও একজন।

এ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা স্থানীয়দের ভাষায়, ‘প্রতিদিনই এখানে রক্ত ঝরছে। আমরা আতঙ্ক নিয়ে রাস্তায় চলি।’

দুর্ঘটনার কারণ
স্থানীয়রা মনে করেন, অতিরিক্ত গতি, বেপরোয়া ওভারটেকিং, অনভিজ্ঞ চালক এবং ট্রাফিক আইন অমান্য করাই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, চালক গাড়ি থামিয়ে যাত্রী বা আরোহীকে চালকের আসনে বসতে দেন— যা সরাসরি প্রাণঘাতী ঝুঁকি তৈরি করছে।

মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি দুর্ঘটনায় আমাদের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। কিন্তু প্রতিবারই একই দৃশ্য— গতি আর অসচেতনতার কারণে মানুষের প্রাণহানি বাড়ছে।’

শ্রীনগর উপজেলার হাসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবু নাঈম সিদ্দিকী বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা রোধে পুলিশ নিয়মিত টহল দেয়। জরিমানার আওতায় আনা হয়। তবে চালকদের সচেতনতা আর গতি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া মৃত্যুর মিছিল থামানো সম্ভব নয়।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে আন্তর্জাতিক মানে নির্মিত হলেও এখানে স্পিড লিমিট কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, নিয়মিত ক্যামেরা নজরদারি, চালকদের প্রশিক্ষণ ও যাত্রীদের সচেতনতা না বাড়ালে দুর্ঘটনা কমবে না।

এক্সপ্রেসওয়ের পাশের গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিদিন দুর্ঘটনার খবর শুনতে শুনতে ভীত। তারা বলছেন, ‘এই সড়ক দিয়ে চলাফেরা মানেই মৃত্যুঝুঁকি। প্রতিদিন সকালে বের হলে মনে হয়, কে আবার আজ রাস্তায় প্রাণ হারাবে।’

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে দেশের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য আশীর্বাদ হলেও এর সাথে যুক্ত হচ্ছে দুর্ঘটনার রক্তাক্ত পরিসংখ্যান। প্রতিদিনের এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় হয়ত ঝরে যাবে আরও অনেক প্রাণ। 

এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

সড়ক দুর্ঘটনা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর