Logo

সারাদেশ

ইটের অভাবে বান্দরবানে থমকে গেছে উন্নয়ন, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

Icon

বান্দরবান প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১৮:১৭

ইটের অভাবে বান্দরবানে থমকে গেছে উন্নয়ন, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

ছবি : বাংলাদেশের খবর

কাঠামোগত উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ইটের অভাবে অনেকটাই থমকে গেছে স্থানীয়ভাবে সবগুলো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। ইটভাটা বন্ধের ফলে শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থান কমে যাওয়ায় হঠাৎ করেই জেলায় বেড়েছে ছিনতাই, চুরি-ডাকাতির মত অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড।

অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে ইটভাটার সঙ্গে জড়িত পরিবহন, জ্বালানি, খাদ্য সরবরাহসহ বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত প্রায় লক্ষাধিক শ্রমজীবী মানুষ। দ্রুত সমাধান না হলে ভুক্তভোগীরা আন্দোলনে নামার হুশিয়ারি দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, স্থানীয়ভাবে সড়ক নির্মাণসহ সরকারি বেসরকারি অবকাঠামোগত উন্নয়নে ইটের চাহিদার প্রয়োজনে বান্দরবান সদর উপজেলায় ১১টি ইটের ভাটা গড়ে তোলা হয়েছিল। পরবর্তী চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায় আরও ৬০টি ইটের ভাটা গড়ে উঠে। গত ৫ আগস্ট সরকারের পট-পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নির্দেশনা দেন দেশের অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করতে হবে এবং পরিবেশ বান্ধব ব্লক ইট তৈরি করা হবে। পার্বত্য জেলায় কোনো ভাবেই ইটভাটা করতে দেয়া হবেনা বলেও জানানো হয়। কিন্তু ইটের বিকল্প এখনো কিছু গড়ে উঠেনি।

এমন সিদ্ধান্তে সবগুলো ইটভাটা বন্ধ হলে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ'সহ জেলায় চলমান এবং পরিকল্পনা নেয়া হাজার কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি সবগুলো উন্নয়ন কাজই থমকে যাবে। এর প্রভাব পড়বে গোটা বান্দরবান জেলার অর্থনীতির ওপরেও।

স্থানীয় উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার হুমায়ুন, রেজা সেলিমসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, পরিবেশ রক্ষার নামে এমন সিদ্ধান্ত নতুন বিপর্যয় ডেকে আনবে। স্থানীয়ভাবে অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি ইটের অভাবে থমকে যাবে সবধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। পরিবেশের ক্ষতি রোধে প্রয়োজনে নতুন ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়ে পুরোনো গুলোর চালু রাখতে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা যেতে পারে। সরকারের দায়িত্বশীলদের পরিস্থিতি বিবেচনায় চাহিদার ভিত্তিতে পুরোনো ইটভাটা গুলো চালু রাখার দাবি জানাচ্ছি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য ও জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক কেএসমং বলেন, উন্নয়নের স্বার্থেই ইটের প্রয়োজন। ইটভাটা না থাকলে এই অঞ্চল আরও বেশি পিছিয়ে যাবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুপাশে শতশত ইটভাটা চলতে পারলে বান্দরবানও চালু রাখতে হবে। সরকারকে বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। নয়তো সারাদেশের সবগুলোই বন্ধ করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ এমনিতেই বৈষম্যের শিকার। নতুন করে পার্বত্যবাসীকে উন্নয়ন বঞ্চিত করতে বান্দরবান'সহ তিন পার্বত্য জেলায় ইটভাটা বন্ধের হঠকারী সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ পাহাড়ের মানুষ। এমন সিদ্ধান্তে পাহাড়ে কর্মসংস্থান হারিয়েছে হাজার হাজার পরিবার। ফলে বেড়েছে ছিনতাই, চুরি-ডাকাতির মত অপরাধ কর্মকাণ্ডও। সরকারের কাছে দাবি জানাব জনস্বার্থে নতুন ইটভাটা গড়ে তোলা বন্ধে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে পুরোনো ইটভাটা গুলো চালু রাখা হোক।

স্থানীয় ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ও ইটভাটা মালিক মোহাম্মদ ইসলাম, রাজস্বের দাস বিপ্লব বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে গতবছর আমরা ইটভাটা বন্ধ রেখেছি৷ সরকারি কোষাগারে নিয়মমাফিক ভ্যাট ট্যাক্স দেবার পরও আমাদের শতশত কোটি টাকার বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। এতে আমরা অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এবারও ইটভাটা বন্ধ রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে। 

অন্যদিকে বেকার হয়ে শ্রমিকরা এবং উন্নয়ন কাজের ঠিকাদাররা ইটভাটা চালু করতে দাবি জানান। ইটভাটা চালু না করলে রাস্তায় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

এদিকে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান, নিজ জেলায় প্রকল্পে ইট ব্যবহার এবং সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সুষ্ঠভাবে সম্পাদনের স্বার্থে ইটভাটা কার্যক্রম চালুকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পার্বত্য উপদেষ্টা বরাবরে লিখিতপত্র পাঠিয়েছে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর থানজামা লুসাই।

এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত বান্দরবান জেলায় কোনো ইটভাটা চলবেনা। আদালতের নির্দেশনায় ফাইতং ইউনিয়নে ইতিমধ্যে ছয়টি ইটভাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে ইটভাটা বন্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।

  • সোহেল কান্তি নাথ/এমআই

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আন্দোলন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর