তিস্তার তীব্র ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে তীরবর্তী মানুষ

সাহানুর রহমান, রংপুর
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১৯:১০
-68ab0f323b67a.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও তীরবর্তী মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তীব্র স্রোত আর নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ফসলি জমি, ভিটেমাটি ও ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব ভাঙনরোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপা মধুপুর ইউনিয়নের চরঘোনাই এলাকায় তিস্তার স্রোতে ভেঙে যাওয়া বাড়িঘর রক্ষায় স্থানীয়রা নিজেরাই উদ্যোগ নিচ্ছেন। গত বুধবার আছিয়া ও সেলিম দম্পতিকে নদীতে মেশিন লাগিয়ে বালু ফেলতে দেখা যায়। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে পরামর্শ দিচ্ছিলেন প্রতিবেশীরা।
আছিয়া ও সেলিম বলেন, ‘আমাদের আগের ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। কখনো কোনো অনুদান পাইনি। এখন নিজেরাই বাড়ি রক্ষার চেষ্টা করছি। তবে এই ব্যবস্থা ক্ষণস্থায়ী, যেকোনো সময় স্রোতে বিলীন হতে পারে।’
তাদের অভিযোগ, ‘সবাই শুধু দেখে, সাহায্য করে না। সাংবাদিকরা ছবি তুলে নিয়ে যায়, কিন্তু কোনো স্থায়ী সমাধান হয় না। আমরা চাই স্থায়ী বাঁধ। পাড় রক্ষা করতে পারলে ঘরবাড়ি ও জমি দুটোই বাঁচবে।’
তারা জানান, শুকনো মৌসুমে নদীর চরে চিনা বাদাম, সবজি ও ধানচাষ করতেন। কিন্তু এ বছর তীব্র স্রোতে চর ও নদীর পাড় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ‘আগে যেখানে বাড়ি ছিল, সেটা এখন নদীর ভেতর ৫০০ গজ। এবার এইটুকু জায়গাও যদি যায়, আর কোনো জায়গা থাকবে না,’ বললেন সেলিম।
এর আগে অনেকেই বাড়িঘর হারিয়ে অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে গিয়ে উঠেছেন।
মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের চারটি পয়েন্টে তীব্র ভাঙন চলছে। গত কয়েক দিনে পাঁচটি বাড়ি নদীতে চলে গেছে। আবাদি জমিও গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছয় হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, ‘তিস্তার ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছি। তবে তীব্র স্রোতের কারণে অনেক জায়গায় আমরা পৌঁছানোর আগেই বাড়িঘর নদীতে গেছে। পর্যায়ক্রমে সব ভাঙন এলাকায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, ‘তিস্তার তীব্র স্রোতে গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তাৎক্ষণিক সহায়তা হিসেবে শুকনো খাবার, টিন ও নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে।’
এআরএস