স্ত্রীকে হত্যার দায়ে ১৯ বছর সাজা খেটে গ্রামে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন স্বামী

চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৪:১৩
-68aebe0c4c59f.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
শৈশবে বিয়ের পর স্ত্রীর হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া কবির হোসেন (মনির) ১৯ বছর কারাভোগ শেষে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু আজও গ্রামে ফিরতে পারছেন না তিনি।
অভিযোগ, মামলার সময়ই পরিবারের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন তার চাচা আবু তাহের মুন্সি। তার দখলে নিয়েছেন বাড়িঘর, জমিজমা। বড় ভাই ও বোন মারা গেছেন, আরেক ভাই মানসিক রোগে ভুগছেন। ৭০ বছর বয়সি বাবা এখন ভিক্ষা করেন।
কবির জানান, ২০০৭ সালে ১৩ বছর বয়সে একটি সেলুনে কাজ করতেন তিনি। সে সময় বিয়ে করেন। বিয়ের সাত দিনের মাথায় বাজার থেকে বাড়ি ফিরে দেখেন স্ত্রী কুলসুম বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে আছে। বাবা-মা ছিলেন নানাবাড়িতে। থানায় জানালে পুলিশ আসে, সন্দেহভাজন নুরু ও সেলিমকে আটক করে। চাচা আবু তাহেরের সঙ্গেও বিরোধ ছিল জমিজমা নিয়ে। পুলিশ তাদের ছেড়ে দিলেও কবিরকে আটক করে মামলায় ফাঁসানো হয়।
কবির বলেন, চাচা তাকে প্রলোভন দেন—‘ভয় নেই, বলবি তুই মাইরা ফেলছস। তোরে ছাড়িয়ে আনব, আমার মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিব।’ কিন্তু সেই পরামর্শেই তার জীবনে নেমে আসে ১৯ বছরের সাজা। ২০০৯ সালের ৭ এপ্রিল আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেন।
গেল বৃহস্পতিবার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কবির জানান, ‘বৃদ্ধ বাবা জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন। কিন্তু গ্রামে ফিরতে ভয় পাচ্ছি। আত্মীয়-স্বজনরাই আমার ক্ষতি করেছে। তাদের মাঝে আর ফিরতে চাই না।’ বর্তমানে ভোলা শহরে অবস্থান করছেন তিনি।
স্থানীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি রিন্টু হাওলাদার জানান, নববধূ হত্যার ঘটনা তখন এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। মামলার খরচ জোগাতে কবিরের বাবা জমিজমা বিক্রি করেন।
তবে চাচা দাবি করছেন, তিনি জমি কিনে নিয়েছেন। কবির যাদের অভিযুক্ত করছেন, নুরু ও সেলিম বর্তমানে চট্টগ্রামে বসবাস করছেন।
জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সম্পাদক মামুন শেখ জানান, এ বছর জানুয়ারিতে এক জেলেকে দেখতে গিয়ে কবিরের সঙ্গে দেখা হয়। তার করুণ কাহিনি শুনে হাইকোর্টের এক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরে আপিলের মাধ্যমে সাজা শেষ হওয়ার সাড়ে সাত বছর আগে মুক্তি পান তিনি।
ভোলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, ‘এলাকায় ফিরতে কবির যদি পুলিশের সহযোগিতা চান, তাকে আমরা সহায়তা করব।’
এম ফাহিম/এআরএস