গাইবান্ধা-১ : শক্তিশালী জামায়াতের সঙ্গে লড়াই হবে মিত্র বিএনপির

আতিকুর রহমান, গাইবান্ধা
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৮:৫২

গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে সরাসরি লড়াই হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় বিএনপি ও জামায়াত একে অপরের রাজনৈতিক মিত্র হলেও এবার নির্বাচনী মাঠে তারা মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।
সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী জামায়াত ইতোমধ্যেই তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা-১) আসনটি একটি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৮ হাজার ৫৯৯ জন। এর মধ্যে নতুন ভোটার ১৯ হাজার ৫৫৬।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন চরাঞ্চলে অবস্থিত। স্থানীয়রা প্রতিবছর নদীভাঙনের কারণে বসতবাড়ি, জমি ও ফসল হারান। এখানে বিদ্যুৎ, সড়ক, শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবার অভাব দীর্ঘদিন ধরে চলমান।
তারাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা হারুন মিয়া বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়ন প্রতিবছর নদীভাঙনের শিকার হয়। অসংখ্য মানুষ বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ নদীর করাল গ্রাসে চলে যায়। আমরা এমপি বা চেয়ারম্যান জনপ্রতিনিধি তৈরি করি। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের মান উন্নয়নে কোনো পরিবর্তন হয় না। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও আমাদের এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। জনপ্রতিনিধির উন্নয়ন হলেও সাধারণ মানুষের জীবন মান এখনো অপরিবর্তিত।’
আব্দুল কাদের নামের একজন ভোটার বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষকে ভোট থেকে বঞ্চিত করেছে। আমরা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারিনি। এবার তরুণ ভোটারদের জন্য সুযোগ এসেছে। আমরা চাই যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয় করবো।’
স্থানীয় ভোটার দুলু মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমরা মনের মতো কোনো প্রার্থী পাইনি। বিগত তিনটি নির্বাচনে আমাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। এবার আমরা এমন প্রার্থী চাই, যিনি আমাদের ভাগ্য ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করবেন।’
নতুন ভোটার সাইফুল ইসলাম শান্ত বলেন, ‘আগের নির্বাচনে অনেক ভোটার ভোট দিতে পারিনি। জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ ভাগাভাগি করে নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ করত। এবার তরুণ ভোটারদের জন্য সুযোগ এসেছে। আমরা আমাদের ভোটাধিকার সঠিকভাবে প্রয়োগ করব এবং যোগ্য প্রার্থীকে জয়ী করব।’
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে এই আসনে সংগঠনিকভাবে দুর্বল। এখনো দল থেকে মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়নি। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. বাবুল আহমেদ, সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক, জেলা বিএনপির সহসভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মো. জিয়াউল ইসলাম জিয়া, সমাজসেবক মো. আরেফিন আজিজ সরদার সিন্টু এবং জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম জিন্নাহ।
বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছি। ১৫ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিস্টদের দ্বারা নানা হয়রানির শিকার হয়েছি। আমি জেলও খেটেছি, বাড়ি ছাড়া থেকেছি। যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয়, আমি নির্যাতিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে পারবো এবং জনগণের পাশে থেকে কাজ করতে পারবো। মানুষের পাশে দীর্ঘদিন দাঁড়ানো আমার মূল শক্তি।’
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. বাবুল আহমেদ বলেন, ‘গাইবান্ধা-১ আসনে এবার বিএনপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বি জামায়াত। মাঠের রাজনীতি ও ভোটারদের সাড়া তা প্রমাণ করছে। আমাদের লক্ষ্য হলো এমন প্রার্থী নির্বাচন করা, যিনি এলাকার মানুষের ভাগ্য ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করবেন।’
গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমাকে এবার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে এমপি প্রার্থী ছিলাম, কিন্তু জনগণ আমাকে ভোট দিতে পারেনি। আমি এ উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলাম। আমার দল ও এই এলাকার মানুষের ভালোবাসা আছে। নির্বাচিত হলে আমি এলাকার মানুষের খাদেম হয়ে কাজ করব। সারাদেশে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জকে আমাদের এলাকা হিসেবে সবাই চেনে।’
ভোটাররা মনে করছেন, প্রার্থী কতটা বিশ্বাসযোগ্য, জনসেবামুখী এবং এলাকার জন্য কাজের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা নির্বাচনের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের শক্তি থাকলেও এবার ভোটের মূল প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে জামায়াত উঠে এসেছে। স্থানীয় ভোটার ও দলীয় সমর্থন বিজয়ের ক্ষেত্রে নির্ধারক হবে।
গাইবান্ধা-১ আসনটি ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। এটি ১টি পৌরসভা, ১৫টি ইউনিয়ন, ১১০টি মৌজা ও ১৮৯টি গ্রাম নিয়ে গঠিত।
এআরএস