ঝালকাঠিতে কোটি টাকার বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৩৩
-68af091e7071e.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ঝালকাঠির দক্ষিণাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে খাবার পানির তীব্র সংকট বিরাজ করছে। বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুম মিলিয়ে প্রায় সারা বছরই নিরাপদ পানির অভাবে ভোগেন এখানকার বাসিন্দারা।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ নলকূপ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার হাতে নেয় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প। তবে সেই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন না হলে বর্ষার পানি ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহারের লক্ষ্য পূরণ হবে না। এতে পানির সংকট যেমন থেকে যাবে, তেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়বে।
ঝালকাঠি জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের আওতায় সদর উপজেলা ছাড়া অন্য তিন উপজেলায় ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ হাজার ৪২৫টি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ট্যাংক বসানোর কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে বড় অংশের বিল—প্রায় ২০ কোটি টাকা—ইতোমধ্যে উত্তোলন করা হলেও প্রকল্পের সুবিধা অনেক গ্রামীণ এলাকায় পৌঁছায়নি। বিশেষ করে কাঁঠালিয়া উপজেলার দুর্গম গ্রামগুলোতে অনিয়মের অভিযোগ বেশি।
কাঁঠালিয়ার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক ট্যাংক বসানো হলেও শেড নেই। কিছু ট্যাংক মাসের পর মাস ফেলে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ট্যাংক ও সরঞ্জাম আনার খরচ, শ্রমিক নিয়োগ ও কাজ সম্পন্ন করার ব্যয়ও তাদের নিজেদের বহন করতে হয়েছে।
পাটিখালঘাটা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. শাহআলম তালুকদার বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে আমার বাড়িতে ট্যাংক বসানো হয়। কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি পাইনি। মিস্ত্রি নিজেই আনতে হয়েছে। মালামালও নিজের খরচে আনা। ঠিকাদারের কেউ খোঁজও নেয়নি।’
কৃষক অদুদ মিয়া বলেন, ‘ট্যাংক বসাতে গিয়ে প্রায় এক হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তারপরও পাইপ ঠিকমতো লাগানো হয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের খরচে পাইপ লাগাতে হয়েছে।’
আরেক কৃষক জসিম জানান, ‘দুই-তিন মাস আগে ট্যাংক আনা হলেও চালু করা হয়নি। মালামাল সরবরাহ হয়নি। ফলে বর্ষার পানি সংরক্ষণ করতে পারিনি।’
কাজ করা তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাঠালিয়া উপজেলার দায়িত্বে থাকা এসপি লি.-এর মো. জাফরুল হক বলেন, ‘আমাদের ১ হাজার ৮০৯টি কাজের মধ্যে ৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বর্ষায় কাজ করতে না পারায় বিলম্ব হয়েছে। মালামাল পরিবহনে বাড়তি খরচ হয়েছে। এখনও প্রায় ১০০ ট্যাংকের কাজ বাকি।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাইফুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ চলমান। শেড নির্মাণ ও মালামাল আনার খরচ ঠিকাদারের। অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার এরশাদুজ্জামান মৃদুল বলেন, ‘লোকবল স্বল্পতার কারণে প্রতিটি স্থানে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে শেড ও মালামাল পরিবহনের দায়িত্ব ঠিকাদারের। একটি প্যাকেজের কাজ বন্ধ থাকায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত কাজ শেষ করতে।’
আ. রহিম রেজা/এআরএস