কুষ্টিয়া রেলওয়ে স্টেশনে মা-মেয়ের জীবন সংগ্রামের ৫৪ বছর

আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৪:০৬
-68b00df777cf9.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
কুষ্টিয়া কোর্ট রেলওয়ে স্টেশনের বারান্দা ও আশেপাশে দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে জীবন কাটাচ্ছেন বাতাসি বেগম (৫৪ আনুমানিক) ও তার মা খোদেজা বেগম (৭৭)। যুদ্ধ, দারিদ্র্য ও সামাজিক অবহেলার স্রোতে ভেসে আসা এই মা-মেয়ের গল্প শুধু কুষ্টিয়ার নয়, বরং বাংলাদেশের বহু শহর ও গ্রামের একাকিত্ব ও সংগ্রামের চিত্র।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের শেষ দিকে যুদ্ধের সময়ে খোদেজা বেগম তার মেয়ে বাতাসিকে নিয়ে প্রথমে ফরিদপুর, পরে রাজবাড়ীর পাংশা বাগদুলি গ্রাম ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে কুষ্টিয়া কোর্ট রেলওয়ে স্টেশন আসেন। স্বামীর মৃত্যুর পর খেজুরের রস খেয়ে দিন কাটানো খোদেজা বেগম যুদ্ধ শেষে এক কঠিন জীবনের যুদ্ধে নেমে পড়েন।
বছরের পর বছর ধরে কোর্ট স্টেশনের বারান্দায় রাতযাপন, দিনের কাজ আর সংগ্রামের মধ্যেই কেটেছে বাতাসি বেগমের জীবন। কৈশোর পার করে তিনি ৫৪ বছর বয়সে স্থানীয়দের মধ্যে ‘বাতাসি পাগলি’ নামে পরিচিত। দিনের বেলায় চায়ের দোকানে সময় কাটানো, দিনে সাত কাপ চা খাওয়া, আর কোর্ট ষ্টেশনে ঝারুদার হিসাবে সামান্য বেতনে কাজ—এভাবেই চলে তার দিন।
খোদেজা বেগম স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘যুদ্ধের সময় ফ্যানের পানি খাইয়ে দিন কাটাইছিলাম। যুদ্ধ শেষ হলে মেয়ে নিয়ে কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশনে চলে আসি। রাত কাটাতাম, জীবনের সাথে যুদ্ধ করে। তখন রাতের খারাপ মানুষও থাকতো। এখন বয়সের ভারে অনেকক্ষণ চুপ থাকি।’
বাতাসি বেগম বলেন, ‘আমার জন্য যদি একটি ঘর করা যেত, সেখানে থাকতাম। ছোটবেলা থেকে এখানে থাকছি, আজও ঘর পাইনি। ভোটার নই, ঘর পাব কি না, সেই চিন্তাই আমাকে খায়। আল্লার ছাড়া অন্য উপায় নেই।’
স্টেশন সরদার মুকুল বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে তাদের দেখছি। জীবনের শেষদিনে ঘর দেখার সৌভাগ্য তারা পাননি। তাদের সঙ্গে অন্য কোনো খারাপ কিছু দেখিনি।’
স্টেশনের বই বিক্রেতা কামাল যোগ করেন, ‘৩২ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করি। মা-মেয়ের মধ্যে খারাপ কিছু দেখিনি। উঁচবৃত্তরা একটু সাহায্য করলে এরা ভালো থাকতে পারতো।’
স্টেশন মাস্টার ইতি আরা বলেন, ‘বাতাসি খুব ভালো মেয়ে, তার মা ও ভালো মানুষ। তারা সহযোগিতাপরায়ণ। আমরা চাই বৃত্তবানরা এগিয়ে আসুক, তাদের মত মানুষকে সাহায্য করুক।’
এআরএস