বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, নির্বাচনের আগে অবশ্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।

শনিবার (৩০ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বগুড়ার শহীদ টিটু মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বগুড়া জেলা শাখার ষাণ্মাসিক রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আগামীকাল নির্বাচন হলেও জামায়াতে ইসলামী প্রস্তুত। তবে নির্বাচনের আগে গণহত্যার বিচার, মৌলিক সংস্কার এবং প্রশাসনের মধ্যে থাকা ফ্যাসিবাদী দোসরদের গ্রেফতার করতে হবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না করলে জনগণ যেনে-তেনে একটি নির্বাচন চায় না।’

তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী সকল ইসলামী দল ও সমমনা-দেশপ্রেমিক দলকে সঙ্গে নিয়ে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। বৃহত্তর ঐক্য গড়ে হায়েনার কবল থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করার লক্ষ্যে জামায়াত কাজ করে যাচ্ছে।

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান উপদেষ্টাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, জনগণ মনে করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি দলের পকেটে ঢুকে গেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, মানুষের এই আশংকা মিথ্যা প্রমাণিত হবে। তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসের সরকার জনগণের সমর্থনে গঠিত হয়েছে। তাই জনগণের জন্য কাজ করতে হবে।’

জামায়াতের লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা গোষ্ঠীর জন্য রাজনীতি করি না। দেশের মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করি। আমরা একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী, মানবিক ও ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে চাই, যেখানে দূর্নীতি ও চাঁদাবাজি থাকবে না। জনগণ আমাদেরকে দায়িত্ব দিলে আমরা রাজা হই না, বরং জনগণের সেবক হয়ে থাকি।’

তিনি জানান, জামায়াত নারীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা নিশ্চিত করবে এবং চাকরির ক্ষেত্রে অবারিত সুযোগ দেবে। অমুসলিমদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেওয়া হবে। তিনি বলেন, যারা অমুসলিমদের ব্যবহার করে রাজনীতি করেছে, তাদের কারণে বহু অমুসলিম নেতা-জনগণ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আগামী নির্বাচনে অমুসলিম ভোটাররা তার সঠিক জবাব দিবেন।

রফিকুল ইসলাম খান উল্লেখ করেন, জনগণ নির্বাচনে নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। কিছু রাজনৈতিক নেতা হুংকার দিচ্ছেন, ভোট কেন্দ্রে দাঁড়ানোও নিরাপদ নয়। এছাড়া কেউ ব্যালট পেপার ছাপিয়ে নিয়ে আসার হুমকি দিয়েছেন। এটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ভালো সংকেত নয়। তিনি অভিযোগ করেন, মৌলিক সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন কমিশন রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেরকে হত্যা করেছে। এসব মামলায় জড়িত বিচারক, আইনজীবী ও সাক্ষীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখী আনা উচিত। জুলাই পরবর্তী সময়ে জনগণ এসব অন্যায়কারীদের শাস্তি দেখতে চায়।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বগুড়া জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হক সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন, বগুড়া অঞ্চলের টিম সদস্য অধ্যাপক মাওঃ আব্দুর রহিম ও অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বগুড়া শহর আমির অধ্যক্ষ মাওঃ আবিদুর রহমান সোহেল, বগুড়া-২ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ মাও. শাহাদাতুজ্জামান, বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আলহাজ্ব দবিবুর রহমান, বগুড়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী নুর মোহাম্মদ আবু তাহের, জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক আব্দুল বাছেদ, অধ্যাপক আব্দুল হাকিম সরকার, শিবিরের পশ্চিম জেলা সভাপতি সাইয়েদ কুতুব ও পূর্ব জেলা সভাপতি জুবায়ের আহমেদ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা নায়েবে আমির মাওঃ আব্দুল বাছেদ ও সেক্রেটারি মাওলানা মানসুরুর রহমান।

এআরএস