উত্তরের সমতলে চা উৎপাদনে ধস, পাতাপচা রোগে বিপাকে চাষিরা

এসকে দোয়েল, পঞ্চগড়
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪৫
-68b53311cccdb.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড় জেলা দেশের চা উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখলেও এবার সমতলভূমিতে চা উৎপাদনে ধস নেমেছে। চা বাগানগুলোতে পাতাপচা রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কাঁচা চা পাতার উৎপাদন কমেছে। চাহিদা অনুযায়ী কারখানায় পাতা পৌঁছানোও কঠিন হয়ে পড়েছে।
চাষিরা জানিয়েছেন, চা গাছের কুঁড়ি থেকে নতুন পাতা বের হওয়ামাত্র তা পচে গিয়ে কালচে রঙ ধারণ করছে। কীটনাশক ও অন্যান্য ওষুধ প্রয়োগের পরও কাঙ্ক্ষিত ফল মেলছে না, ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় প্রচণ্ড খরার প্রভাব পড়েছে চা শিল্পে। এছাড়া বাগানে লাল মাকড়, কারেন্ট পোকা ও লোফারের আক্রমণও বাড়ছে।
চা বাগানগুলোতে কাঁচা পাতার উৎপাদন কমায় কারখানাগুলো এক শিফটে বা সপ্তাহে মাত্র ২–৪ দিন চালু রাখা বাধ্য হচ্ছে। ফলে কারখানা মালিক, শ্রমিক ও চাষিরা সব স্তরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
২০২৩ মৌসুমের তুলনায় ২০২৪ সালে পঞ্চগড়ে সমতলভূমির চা উৎপাদন কমে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার ১৫১ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। যা আগের মৌসুমের চেয়ে ৩৫ লাখ ৫৭ হাজার কেজি কম; জাতীয় উৎপাদনের অংশও ১৭.৪৪ শতাংশ থেকে ১৫.৪৭ শতাংশে নেমেছে।
চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় নিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান ১,০৬৫টি ও বড় চা বাগান ৮টি, আর অনিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে ৫,৮৫৫টি ও বড় চা বাগান ২০টি।
চাষি আজিজুল হক, কামাল হোসেন ও মোতাহের জানান, চলতি মৌসুমে চা পাতার দাম কারখানায় ২৪–২৫ টাকা হলেও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ হচ্ছে না। পাতাপচা রোগ ও পোকার আক্রমণের কারণে চা বাগান টিকিয়ে রাখতে সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ অনেক বেড়ে গেছে।
করতোয়া চা কারখানার ম্যানেজার মনজুর আলম বলেন, ‘পাতার উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী কারখানায় পাতা পাচ্ছি না। চাষিরা দাম পেয়েও উৎপাদন কমে যাওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছে না।’
চা চাষে আলাদা সারের বরাদ্দ না থাকায় চাষিরা বোরো-আমনের বরাদ্দকৃত সার ব্যবহার করছেন। এতে চা বাগান ও অন্যান্য ফসলের চাষিরা দু’পক্ষই সমস্যায় পড়ছেন। চলতি অর্থবছরে পঞ্চগড়ে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি-এর নির্দিষ্ট বরাদ্দ আছে, তবে চা চাষের জন্য তা আলাদা নয়।
চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান বলেন, খরা ও গরমের কারণে প্রথমে লাল মাকড়, পরে লোফারের আক্রমণ দেখা দেয়। এরপর পাতাপচা রোগ শুরু হয়। কপার, হাইড্রোক্সাইড ও অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রাকনাশক দুই দফায় স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে দৈনিক পাতা সংগ্রহ তিন লাখ কেজি থেকে বেড়ে পাঁচ লাখ কেজিতে পৌঁছেছে। আশা করা হচ্ছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় রেকর্ড উৎপাদন সম্ভব হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, ‘চা বাগানের জন্য সার বরাদ্দ শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আমরা বারবার চা বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ হয়নি। সার সংকট থাকায় চা চাষিরা অনেক সমস্যায় পড়ছেন।’
পঞ্চগড়ে চা শিল্প অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও পাতাপচা রোগ, পোকার আক্রমণ, খরার প্রভাব ও সারের সংকট চাষিরা এবং কারখানাগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। চা উৎপাদনের রেকর্ড স্থিতি বজায় রাখতে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
এআরএস