Logo

সারাদেশ

নুরাল পাগলার দরবার থমথমে, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৩

নুরাল পাগলার দরবার থমথমে, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা

ছবি : সংগৃহীত

রাজবাড়ীতে আলোচিত নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) কয়েক দফায় হামলার পর ওই এলাকায় বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নতুন করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দরবারের ভেতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ধ্বংসাবশেষ। সেসব থেকে মাঝেমধ্যে ধোঁয়া বের হতে দেখা যাচ্ছে। হামলার খবরে সেখানে ছুটে এসেছে উৎসুক জনতা। ধ্বংসস্তুপ এক নজর দেখতে ভিড় করছে তারা।

এদিকে, নুরাল পাগলার দরবারে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলাটি করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত দরবার এলাকায় অবস্থান করে দেখা যায়, গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড জুড়ান মোল্লার পাড়ায় অবস্থিত নুরাল পাগলার দরবারের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ রয়েছে। দরবারের ভেতরে একটি তিনতলা এবং অপরটি দ্বিতল ভবন। তিনতলা ভবনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকতেন নুরাল পাগলা। প্রতিটি ভবনের সবকটি কক্ষ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। দামি দামি আসবাবপত্র সব খোয়া গেছে। অবশিষ্ট জিনিসপত্র ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভবন থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে অবস্থিত নুরাল পাগলার আস্তানা। টিনশেড ওই ঘরটিতে বসে ভক্তদের সঙ্গে সময় কাটাতেন তিনি। তার মৃত্যুর আগেই টিনশেড ঘরসহ সমতল ভূমি থেকে কয়েক ফুট উচুঁ করে বেদি তৈরি করা হয়। বেদির ওপর একপাশে টিনশেড ঘরে বসে তিনি সময় কাটাতেন, আর মৃত্যুর পর অপরপাশে নুরাল পাগলাকে কবর দেওয়া হয়।

নুরাল পাগলার দরবার থমথমে, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা

তবে শুক্রবার হামলার পর দরবারের ভেতরে চারদিক এখন ধ্বংসস্তুপ। ধ্বংসস্তুপ থেকে এখনও ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। কেউ কেউ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসস্তুপ থেকে চাল, ডালসহ জিনিসপত্র কুড়িয়ে নিচ্ছেন। পুলিশ সদস্যরা মাঝেমধ্যে উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দিচ্ছেন, দরবার থেকেও তাদের বের করে দিচ্ছেন।

কুষ্টিয়ার পোড়াদাহ থেকে আসা আবুল হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার দেশের আলোচিত খবর ছিল নুরাল পাগলার দরবারে হামলা। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুকে খবরটি দেখে আর থাকতে পারলাম না। কী হয়েছে স্বচক্ষে দেখতে রাতে গোয়ালন্দে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আসি। আজ সকালে দরবারে এসে দেখে গেলাম।’

তিনি বলেন, ‘তার কাজ বিতর্কিত ছিল, তাই বলে লাশ কবর থেকে তুলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি।’

রাজবাড়ীর পাংশা থেকে আসা রত্মা বিশ্বাস বলেন, ‘প্রায় পনের বছর আগে আমার স্বামীর হার্টের সমস্যা দেখা দিলে কিছু লোকের কথামতো তার (নুরাল পাগলা) কাছে এসেছিলাম। কয়েকবার ঘুরেও তেমন কাজ না হওয়ায় পরে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিলাম। তারপরও তিনি অনেক বড় মাপের মানুষ ছিলেন বলে তাকে আমরা প্রণাম করতাম। দরবারে হামলার কথা শুনে দেখতে এসেছি।’

নুরাল পাগলার দরবার থমথমে, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা

জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে গোয়ালন্দ বাজার আনসার ক্লাব চত্তরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে আসে শত শত মানুষ। বেলা আড়াইটার দিকে হাতুড়ি, শাবল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক মিছিল নিয়ে আসে। এ সময় আয়োজকদের পক্ষ থেকে লাঠিসোঁটা, হাতুড়ি মঞ্চে জমা দিতে বলা হয়। এ ধরনের সরঞ্জাম নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিতে বারণ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরে আসলে তাঁদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে মঞ্চে বক্তব্য চলাকালে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক চড়াও হয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। পুলিশের দুটি গাড়ি এবং ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর করেন। এসময় ১০ থেকে ১২জন পুলিশ সদস্য আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, বেলা ৩টার দিকে তৌহিদী জনতার ব্যানারে উপস্থিত ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা জালাল উদ্দিন প্রামাণিক, সদস্যসচিব বিএনপি নেতা আইয়ুব আলী খানসহ অন্যান্যরা সবাইকে সমাবেশে থাকার আহ্বান জানান। ওই সমাবেশের বাইরে কিছু হলে তার দায়দায়িত্ব তারা বহন করবেন না বলে মাইকে বারবার বলা সত্ত্বেও উত্তেজিত কিছু লোক মিছিল নিয়ে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা করে।

সে সময় ভেতর থেকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন দরবারের খাদেম ও ভক্তরা। ইটপাটকেল ও পাথর নিক্ষেপসহ সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এসবের মধ্যে দরবারের দেওয়াল টপকে কয়েক শ’ লোক ভেতরে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র মালামাল লুটপাট শুরু করে। একপর্যায়ে বিকেল পাঁচটার দিকে নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে কফিনসহ তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দের পদ্মার মোড় এলাকায় সড়কের মাঝে রেখে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

নুরাল পাগলার দরবার থমথমে, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা

সংঘর্ষে আহত রাসেল মোল্লা নামের এক ভক্ত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম তেনাপচা গ্রামের আজাদ মোল্লার ছেলে ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান নুরাল পাগলা। ওইদিন রাতে মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে বিশেষ কায়দায় আস্তানায় তার লাশ দাফন করেন ভক্তরা। এরপর বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কবর সমতল করারসহ কয়েকটি দাবি জানায় স্থানীয় আলেমসহ তৌহিদী জনতা।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জেলা ও উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি ও নুরাল পাগলার পরিবারের সদস্যদের কয়েক দফা বৈঠক হয়। তবে কবর নিচু না করায় দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয় ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারের (৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যে কবর সমতলসহ বিভিন্ন দাবি জানায় তারা। দাবি না মানা হলে শুক্রবার জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং পরবর্তীতে ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়।

নুরাল পাগলার দরবার থমথমে, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা

অভিযোগের বিষয়ে নুরাল পাগলার ছেলে মেহেদী নূর জিলানী গত ২ সেপ্টেম্বর একটি সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, তার বাবার নির্দেশমতো কিছুটা উঁচু করে ইসলামের বিধান মেনে দাফন করা হয়েছে। তিন থেকে চার ফুট উঁচু হতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। তবে কবর নিচু করতে ভক্ত ও খাদেমদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।  

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল ইসলাম বলেন, পুলিশের ওপর হামলায় অন্তত ১০ থেকে ১২জন সদস্য আহত হয়েছেন। হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করেছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি। নুরাল পাগলার দরবারে হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত তার পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ দেয়নি।

সূত্র : ইউএনবি 

এএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

হামলা ও ভাংচুর বাংলাদেশ পুলিশ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর