হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র কাচারি ঘর

এম ফাহিম, চরফ্যাসন (ভোলা)
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৪২
-68bd619082f35.jpg)
চরফ্যাসনে মান্নান চেয়ারম্যানের বাড়িতে পরিত্যক্ত কাচারি ঘর। ছবি : বাংলাদেশের খবর
একসময় গ্রামের প্রতিটি প্রভাবশালী পরিবারের বাড়ির দরজায় বা পুকুরপাড়ের আঙিনায় দেখা যেত ছোট্ট একটি টিনশেড বা ছনের ঘর, যাকে কাচারি ঘর বলা হতো। আজকের প্রজন্মের কাছে এই ঘরের গল্প প্রায় অজানাই থেকে গেছে।
১৯৯০-এর দশকের আগে প্রতিটি বড় বাড়িতেই ছিল কাচারি ঘর। এখানে সকালে ফজরের নামাজের পর শিশুদের ধর্মীয় নিয়মকানুন শেখানোর জন্য মোক্তব বসত। সন্ধ্যা নামলেই জ্বলে উঠত হেরিকেনের মৃদু আলো। বাবা ও শিক্ষকরা নিশ্চিত করতেন, বাড়ির ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিচ্ছে কি না।
ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার পৌরসভা ১ নম্বর ওয়ার্ডের আলহাজ্ব আবদুল মান্নান চেয়ারম্যানের বাড়ির দরজায় এখনো একটি কাচারি ঘরের অস্তিত্ব আছে। তবে সেটি বর্তমানে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে।
স্থানীয় কলেজ শিক্ষক আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সময়ে কাচারি ঘর ছিল, যেখানে আমরা পড়াশোনা করতাম। অতিথিরাও এখানে বসতে পারত। গ্রামীণ বিচার-বিচার ও বৈঠকও এখানেই হতো। এখনকার প্রজন্ম তো জানেই না কাচারি ঘর কী।’
উপজেলার জিন্নাগড় ৩ নং ওয়ার্ডের তালুকদারবাড়ী, মাওলানা ছিদ্দিক বাড়ীর কাচারি ঘরসহ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের কয়েক শতাধিক কাচারি ঘর থাকলেও আজ তা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে।
ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশনের (এফডিএ) পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন জানান, ‘আমাদের বাড়িতেও একটি কাচারি ঘর ছিল। সেখানে আমরা ভাইরা মাষ্টারের তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করতাম। মাগরিবের নামাজ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একটানা পড়তে হতো। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ কাচারি ঘর বিলুপ্ত হয়ে গেছে।’
চরফ্যাসন সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রভাষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চার ভাই বাবার তত্ত্বাবধানে এবং মায়ের কড়া শাসনে হেরিকেনের আলোয় কাচারি ঘরে পড়াশোনা করেছি। বর্তমানে আমরা সবাই সরকারি চাকরিতে আছি।’
মান্নান চেয়ারম্যানের ছেলে ইনাম আহমেদ মাসুম বলেন, ‘সন্ধ্যা নামলেই আমরা বই-খাতা নিয়ে কাচারি ঘরে পড়তে বসতাম। বাবা পাশে বসে দেখতেন পড়ছি কি না।’
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, ‘কাচারি ঘর অতীতে গ্রামীণ শিক্ষা ও সামাজিক জীবনের প্রাণকেন্দ্র ছিল। এখান থেকেই তৈরি হতো সুশিক্ষিত ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন প্রজন্ম। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর যুগে এসব ঐতিহ্য বিলুপ্ত হচ্ছে। তবে স্থানীয় উদ্যোগে পুরনো কাচারি ঘরগুলো সংরক্ষণ সম্ভব।’
এআরএস