পর্যাপ্ত লোকবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সেবা

ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:১৪
-68c2d97e97551.png)
পর্যাপ্ত লোকবল, প্রয়োজনীয় ডিভাইস ও যন্ত্রপাতির অভাবে সব বয়সী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দরকারি সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে তথ্য উঠে এসেছে এক গোলটেবিল আলোচনায়।
‘অধিকার হোক বাস্তব, সেবা হোক প্রবেশযোগ্য; প্রতিবন্ধিতা নয় কোনো সীমাবদ্ধতা; সহযোগিতা, অন্তর্ভুক্তি ও সেবাই হলো সমতা’- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ট্রাস্ট (বিডিডিটি) ও দৈনিক ঢাকা টাইমসের যৌথ আয়োজনে গোলটেবিল আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহ নগরের দিগারকান্দা আসপাডা ট্রেনিং একাডেমিতে।
উল্লিখিত প্রতিপাদ্য নিয়ে বিডিডিটির উদ্যোগে আট বিভাগের ৩২ জেলার স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে গোলটেবিল আলোচনার ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত হলো ময়মনসিংহের পর্বটি।
আলোচনার শুরুতে প্রকল্পের সার্বিক দিকনিদের্শনামূলক স্বাগত বক্তব্য দেন বিডিডিটির সিইও মনিরুজ্জামান খান। তিনি সরকার পরিচালিত প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রগুলোর বাস্তব অবস্থা, সীমাবদ্ধতা এবং মাঠ পর্যায়ে সেবার মান ও চিত্র তুলে ধরেন।
বিভাগীয় চার জেলা- ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোনার প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা তমালিকা চক্রবর্তী, হোসনে আরা, সনজিব চক্রবর্তী ও ইসতাজিদা ফাতেমা, ইউনিসেফ প্রতিনিধি শিশু সুরক্ষা কর্মকর্তা ইমতিয়াজ রেজা, পেরাবাহাসেন্ডা বিজয়ান, এনিমাদ তজু, সালমা খাতুন, ইমন সরকার প্রমুখ গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন।
দেশে বর্তমানে ১০৩টি সেন্টারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিনামূল্যে সেবা দিচ্ছে সরকার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে পরীক্ষামূলকভাবে এই সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়, যার উদ্দেশ্য সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এক ছাদের নিচে সহায়তা দেওয়া।
কিন্তু এই মহৎ উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে। সরকারি কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রতিটি কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সেবা দিতে হয়, বিপরীতে লোকবল মাত্র ৮-১০ জন। তাই কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছেন না তারা।
এই সেবার মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অভিভাবকদের কাউন্সেলিংও অতি জরুরি। সেবাগ্রহীতাদের ফিজিওথেরাপি, মোবাইল ক্যাম্পের মাধ্যমে সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
আলোচনায় সেবা প্রদানকারীরা ভালো মনোভাব নিয়ে কাজ করছেন কি না সেদিকে খেয়াল রাখা, সেবাগ্রহীতা কতটুকু সেবা পাচ্ছেন, স্বল্প লোকবল নিয়ে কতজনকে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে- এসব তথ্য যেমন তুলে ধরা হয়, তেমনি প্রতিদিন দরিদ্র রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছে না সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিবহনের অভাবে ইত্যাদি সীমাবদ্ধতার কথাও উঠে আসে।
১২ ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বিনামূল্যে সেবা দেয়া হচ্ছে এসব কেন্দ্রে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছেন, তারা এখনো জানেন না তাদের জন্য কী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তাই কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে সরকারিভাবে প্রচারণা বাড়াতে হবে মিডিয়ার মাধ্যমে। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। এমন পরামর্শ উঠে আসে আলোচনায়।
আলোচকরা মনে করেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাবলম্বী করার জন্য সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তাদের জন্য কর্মসংস্থান করতে হবে। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি বড় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এই মন্ত্রণালয়ের বাজেট কম। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করতে বাজেট বাড়াতে হবে।
গোলটেবিল আলোচনায় বলা হয়, শূন্য থেকে ১০০ বছরের সেবাগ্রহীতাকে সেবা দিতে হয় এসব সেবাকেন্দ্রে। কোন রোগীর কী চিকিৎসা তার সঠিক ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। একজন রোগীকে দুটির বেশি সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভিশন দেখাতে হবে, সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ভালো অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে বলে কোনো কোনো আলোচক উল্লেখ করেন।
সেবাকেন্দ্রের অবকাঠামোগত সুবিধার দিকে নজর দেওয়া দরকার। যেমন আলোচনায় এসেছে- ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন রয়েছে, কিন্তু সেখানে সেবা দেওয়ার জন্য কক্ষ সংখ্যা কম। উপর মহলের কোনো কোনো কর্মকর্তার হস্তক্ষেপের কারণে জেলা পর্যায়ে কাজ করতে বাধার মুখে পড়তে হয় বলেও তথ্য উঠে আসে আলোচনায়।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণ ও সমাজের মূল স্রোতে শামিল করার জন্য মানুষের ইতিবাচক মানসিকতার ওপর গুরুত্ব দেন আলোচকরা। মানুষের মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তন না এলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সার্বিক অধিকার অবহেলিত থেকে যাবে বলে মন্তব্য করেন তারা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজের বোঝা নয়, সেটিও মনে করিয়ে দেন তারা।
গোলটেবিল আলোচনায় সমাপ্তি বক্তব্য দেন প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম সিদ্দিকী।
এইচকে/