প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতাল প্রয়োজন

ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:১৭

দেশে নানা বিষয়ে বিশেষায়িত হাসপাতাল থাকলেও কেবল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য কোনো আলাদা হাসপাতাল নেই। এমন একটি হাসপাতাল হলে সারা দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নির্বিঘ্নে চিকিৎসাসেবা নিতে পারতেন।
বর্তমানে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এমনকি উপজেলা পরিষদেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওঠা-নামার জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেই। ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে গিয়ে তারা বাধার সম্মুখীন হন। আবার প্রতিবন্ধী সেবাকেন্দ্রগুলোতে নারী থেরাপিস্ট না থাকায় অনেক নারী সেখানে সেবা নিতে যেতে পারেন না।
এমন নানা সমস্যা ও করণীয় বিষয়ে মতামত উঠে এসেছে ময়মনসিংহ বিভাগের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে কৌশলগত আলোচনা সভায়। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ট্রাস্ট (বিডিডিটি) ও দৈনিক ঢাকা টাইমস আয়োজিত এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহ নগরের দিগারকান্দা আসপাডা ট্রেনিং একাডেমিতে।
আলোচনার শুরুতে প্রকল্প সহকারী তাসমিয়া জাহান ইকরা দিকনির্দেশনামূলক স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্যকেন্দ্রগুলোর বাস্তব অবস্থা, সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনা এবং মাঠপর্যায়ের সেবার মান ও বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন।
এই কৌশলগত আলোচনায় ময়মনসিংহ জেলার ২০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
কলেজছাত্রী রূপালী আক্তার, যিনি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, বলেন, ‘সেবাকেন্দ্রে যেতে হলে মেডিকেল কলেজ থেকে নানা ধরনের টেস্ট করতে হয়, যা ব্যয়বহুল। এছাড়া সেন্টারে নারী সেবা প্রদানকারী নেই। পুরুষ কর্মীরা থেরাপি দেন, তাই অনেক নারী সেখানে যেতে চান না। নারী সেবিকা থাকা জরুরি।’
আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী অজয় কৃষ্ণ দে বলেন, ‘ময়মনসিংহ জেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কোনো র্যাম্প নেই। ফলে আমরা অফিস বা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারি না।’
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলাম সরকারি হাসপাতালে হয়রানির অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘টিকিট করে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। স্টাফরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। আমাদের জন্য দ্রুত চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি। যদি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা একটি হাসপাতাল হতো, তবে সবাই নির্বিঘ্নে সেবা নিতে পারত।’ তিনি ট্রেনস্টেশন, বাসটার্মিনাল ও ভ্রমণপথে বিশেষ সেবার দাবিও জানান।
শিক্ষার্থী মিলি আক্তার বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় না।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন তানিয়া, হারুন, রফিকুল ইসলাম, লিলি আক্তার, সিজার আকন্দ, বিলকিস আক্তার, শান্ত, মো. এনায়েত হোসেন ও অ্যাডভোকেট নাজমুল হক।
বক্তারা বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন না, কারণ হুইলচেয়ার দিয়ে ওঠার কোনো ব্যবস্থা নেই। দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানে, বাসস্টেশন, রেলস্টেশন কিংবা উপজেলা পরিষদে নির্বাহীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেও একই সমস্যায় পড়তে হয়, কারণ সেখানেও র্যাম্প নেই।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মোটিভেশনের ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা। তাদের মতে, এটি করলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নিজের কাজ নিজেরাই করতে পারবেন।
সেবাকেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই, যা আছে তা-ও পর্যাপ্ত নয়। কোনো যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে মেরামতের ব্যবস্থাও থাকে না। এতে সেবার মান ব্যাহত হয়।
একজন অংশগ্রহণকারী জানান, তিনি ১২ বছর বয়সে হুইলচেয়ারের জন্য আবেদন করেছিলেন, কিন্তু চেয়ারটি হাতে পান ১৪ বছর বয়সে। তত দিনে তার শারীরিক গঠন পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় সেই হুইলচেয়ারটি আর উপযোগী থাকেনি।
বক্তারা আরও বলেন, সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মধ্যেই কোনো না কোনো প্রতিভা ও ক্ষমতা রয়েছে। সেগুলো শনাক্ত করে চিকিৎসা ও সুযোগ দেওয়া হলে তারাও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারবেন।
আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ট্রাস্টের (বিডিডিটি) সিইও মনিরুজ্জামান খান, কনসালট্যান্ট অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম সিদ্দিকী, প্রকল্প সহকারী মো. মবিনুর রহমান এবং দৈনিক ঢাকা টাইমস-এর ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি জয়নাল আবেদীন।