শৌচাগার পরিষ্কার না করায় স্কুলছাত্রীকে পিটিয়ে জখম করলেন প্রধান শিক্ষক

বরগুনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৫
---2025-09-14T163517-68c69a8b59952.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
বরগুনায় স্কুলের বাথরুম (শৌচাগার) পরিষ্কার না করার কারণে এক স্কুলছাত্রীকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক মো. হায়দার গাজীর বিরুদ্ধে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সদর উপজেলার ফুলঝুরি ইউনিয়নের রোডপাড়া শহীদ স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) জনসমক্ষে আসলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মোসা মারজানা (১১), তিনি বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিদ্যালয়ে পাঠদানের সময় প্রধান শিক্ষক ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাথরুম (শৌচাগার) পরিষ্কার করার জন্য বলেন। শিক্ষার্থীরা তা করতে অপারগতা প্রকাশ করলে শিক্ষক তাদেরকে চাপ দেন। একপর্যায়ে ভয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যায়। পরে তাদের ধরে এনে প্রধান শিক্ষক বেধরক পেটান। এতে মারজানার অবস্থা গুরুতর, তিনি ঠিকমত চলাফেরা করতে পারছেন না।
ঘটনার পরই মারজানার মা মাসুমা বেগম বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। বিষয়টি জনসমক্ষে আসার পর সচেতন মহলে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। স্থানীয়রা জানান, শিক্ষার্থীদের শাসন করা স্বাভাবিক, তবে শাসনের নামে শারীরিকভাবে আহত করা মোটেও কাম্য নয়। এতে শিশুদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয় এবং বিদ্যালয়ে উপস্থিতির সমস্যা দেখা দেয়।
মারজানার মা মাসুমা বেগম বলেন, ‘স্কুলের বাচ্চাদের বাথরুম (শৌচাগার) পরিষ্কার করতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা পরিষ্কার না করে রাস্তার পাশে লুকিয়ে ছিল। পরে অন্য এক শিক্ষক বিষয়টি হেড স্যারের কাছে জানান। হেড স্যার বাচ্চাদের ধরে এনে সবাইকে পেটান। প্রথমে আমার মেয়েকে বেধরক পেটানো হয়। স্কুল ছুটির পর বাসায় এসে তার শারীরিক অবস্থা দেখে আমি সহ্য করতে পারিনি। ওইদিনই ইউএনও অফিসে অভিযোগ করেছি। আমার মেয়ে এখন ঠিকমত হাঁটতে পারছে না।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মারজানা বলেন, ‘হেড স্যার আমাদের বাথরুম (শৌচাগার) পরিষ্কার করতে বলেছিলেন, কিন্তু আমরা লুকিয়ে ছিলাম। তারপর স্কুলে এনে আমাদের অনেক পেটানো হয়। এখন আমি ঠিকমত হাঁটতে পারছি না।’
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক হায়দার গাজী অভিযোগটি আংশিক স্বীকার করে বলেন, ‘আমি শুধু মারজানাকে নয়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীকে শাসন করেছি। এটি বাথরুম (শৌচাগার) পরিষ্কারের জন্য হয়নি। তারা ক্লাসে দুষ্টুমি করত, তাই শাসন করেছি। সামান্য মেরেছি। বিষয়টি অন্য খাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, অভিযোগটি সঠিক নয়।’
বরগুনা সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা জেরীনা আকতার বলেন, ‘শাসনের নামে এমন আচরণ মোটেই কাম্য নয়। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আছে এবং নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াছিন আরাফাত রানা বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
খান নাঈম/এমআই