পদ্মা সেতুতে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন চালু হচ্ছে আজ

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৫০
---2025-09-15T074734-68c770cd3a554.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
দুই বছরের অপেক্ষা শেষে অবশেষে পদ্মা সেতুতে শুরু হচ্ছে নন-স্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) সিস্টেম। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা থেকে লাইভ পাইলটিং আকারে এই আধুনিক ব্যবস্থা চালু করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ফলে চলন্ত গাড়িতেই টোল পরিশোধ করে সেতু পার হওয়া যাবে, যা যাত্রীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি অনেকটাই কমিয়ে আনবে।
এছাড়াও রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সেতু কর্তৃপক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের বিশেষ নির্দেশনায় ইটিসি সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি মূলত লাইভ পাইলটিং হলেও সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
শরীয়তপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. হারুন মোল্লা বলেন, `আমরা প্রায়ই ঢাকায় যাতায়াত করি। আগে টোল দেওয়ার সময় গাড়ি থামিয়ে দীর্ঘ লাইন ধরতে হতো। এতে অনেক সময় নষ্ট হতো। ইলেকট্রনিক টোল চালু হলে গাড়ি না থেমেই টোল দেওয়া যাবে- এতে সময়ও বাঁচবে, ঝামেলাও কমবে।'
মাদারীপুরের গৃহশিক্ষক শাহনাজ আক্তার বলেন, ‘টোল প্লাজায় ভিড়ের কারণে অনেক সময় দেরি করে গন্তব্যে পৌঁছাতে হতো। এখন গাড়ি চলন্ত অবস্থায় টোল কেটে নেওয়া হবে জেনে খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে উৎসবের সময় যখন ভিড় বেড়ে যায়, তখন এই ব্যবস্থা যাত্রীদের জন্য অনেক বড় সুবিধা হবে।’
যানজট ও ভোগান্তি কমবে
পদ্মা সেতুর ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টোলপ্লাজায় প্রায়ই দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হয়। ঈদযাত্রা ছাড়াও নিয়মিত সময়ে টোল দেওয়ার জন্য গাড়ির জট তৈরি হয়, এতে সময় নষ্ট হয় এবং যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ে। ইটিসি চালুর মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (RFID) প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায় হবে দুই পারে মোট চারটি লেনে। অন্য ১১টি লেনে টোল আদায় আগের মতো ম্যানুয়েল পদ্ধতিতেই চলবে।
রেজিস্ট্রেশন ও রিচার্জ প্রক্রিয়া
ইটিসি সিস্টেম ব্যবহার করতে হলে গাড়ির মালিককে প্রথমে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের TAP অ্যাপে গিয়ে “D-Toll” অপশনের মাধ্যমে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন ও রিচার্জ সম্পন্ন করতে হবে। এরপর পদ্মা সেতুর নির্ধারিত RFID বুথে প্রথমবারের মতো ট্যাগ চেক ও রেজিস্ট্রেশন শেষ করতে হবে। প্রক্রিয়া শেষ হলে গাড়িচালকেরা ন্যূনতম ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে ইটিসি লেন ব্যবহার করতে পারবেন। তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাকাউন্ট থেকে টোল কেটে নেওয়া হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে শুধুমাত্র TAP অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন ও রিচার্জ করা যাবে। তবে ভবিষ্যতে অন্যান্য ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপও যুক্ত হবে। এ জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের “a2i” উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পদ্মা সেতুতে ইটিসি চালু হলেও সবার জন্য উন্মুক্ত করতে সময় লেগেছে দুই বছরের বেশি। অবশেষে আজ থেকে চালু হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত এই সেবা।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক শেখ ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘নন-স্টপ ইটিসি (ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন) সিস্টেম আগামীকাল দুপুর ২টা থেকে লাইভ পাইলটিং আকারে চালু হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১০ থেকে ১৫ দিন এই লাইভ পাইলটিং চলবে। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী এটি চূড়ান্তভাবে ঘোষণা দিয়ে স্থায়ীভাবে চালু করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা একে ‘লাইভ পাইলটিং’ বললেও ব্যবহারকারীরা তাদের গাড়ি নিয়ে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় লেন ব্যবহার করে নন-স্টপ পারাপারের সুযোগ পাবেন। এর জন্য প্রথমে ‘ট্রাস্ট অ্যান্ড পে (TAP)’ অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক নয়। অ্যাপে ক্রেডিট কার্ডসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে রিচার্জ করার সুযোগ থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাওয়া প্রান্তের ওয়েই-ইন-মোশনের পাশে অবস্থিত RFID বুথে একবার এসে ট্যাগ রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। যেহেতু সিস্টেমটি RFID-ভিত্তিক, তাই ট্যাগটি কার্যকর আছে কি না সেটি সেখানেই পরীক্ষা করা হবে। সব ঠিক থাকলে ব্যবহারকারী সিস্টেমে যুক্ত হবেন এবং এরপর থেকে গাড়ি থামানো ছাড়াই সেতু পার হওয়া যাবে। যদি ট্যাগে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়, তবে নিকটবর্তী বিআরটিএ অফিস থেকে ট্যাগ পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হবে।’
- আবু সাঈদ/এমআই