উত্তরের সমতলে সবুজায়ন : টি ট্যুরিজমে অপার সম্ভাবনা

এসকে দোয়েল, পঞ্চগড়
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:১২

ছবি : বাংলাদেশের খবর
চট্টগ্রাম-সিলেটের পর দেশের তৃতীয় চায়ের জেলা পঞ্চগড়। সমতলের বুকে দিগন্তজোড়া সবুজ চায়ের বাগান এখন এ জেলার অপরূপ সৌন্দর্যের পরিচায়ক। হিমালয়কন্যা হিসেবে পরিচিত এই সীমান্তজেলায় চা শিল্পকে ঘিরে গড়ে উঠছে পর্যটন শিল্পের নতুন সম্ভাবনা।
এক সময়ের পতিত গো-চারণভূমি এখন হাজার হাজার হেক্টর সবুজ চা বাগানে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট ও চা বোর্ডের উদ্যোগে কৃষকরা আঙিনাতেও চা গাছ লাগাচ্ছেন। দুই দশকের এই ‘নীরব বিপ্লব’ শুধু অর্থনীতিকেই নয়, পর্যটন শিল্পকেও পাল্টে দিয়েছে।
১৯৯৬ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চা চাষ শুরু হয় পঞ্চগড়ে। ২০০০ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করে তেঁতুলিয়া টি কোম্পানি ও কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট। বর্তমানে জেলায় নিবন্ধিত ক্ষুদ্র চা বাগান আছে এক হাজার ৬৫টি, বড় বাগান আটটি। অনিবন্ধিত ছোট-বড় মিলিয়ে বাগানের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। এসব বাগানে উৎপাদিত চা প্রক্রিয়াজাত হয় ২৮টি কারখানায়।
চা বাগানের সবুজ সৌন্দর্য ঘিরে গড়ে উঠছে রিসোর্ট, হোটেল ও রেস্তোরাঁ। তেঁতুলিয়ায় কাজী অ্যান্ড কাজীর টি এস্টেটের ‘আনন্দধারা রিসোর্ট’, ডাহুক টি রিসোর্ট ও নতুন নির্মীয়মাণ টি ভ্যালি গ্রীন রিসোর্ট ইতোমধ্যে পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ছে।
কৃষিভিত্তিক পর্যটনের অংশ হিসেবে এ অঞ্চলে বাড়ছে ইকো ট্যুরিজমের সম্ভাবনাও। সীমান্তঘেঁষা দর্জিপাড়া-শারিয়ালে এনজিও ইএসডিও গত কয়েক বছর ধরে বিদেশি টিউলিপ ফুলের চাষ করছে। শীত মৌসুমে হাজারো পর্যটক এ ফুল দেখতে ভিড় করেন। সংস্থাটি এখানে ‘মহানন্দা ইকো কটেজ’ও নির্মাণ করেছে।
স্থানীয় পর্যটক আল ইমরান বলেন, ‘সমতলে চা বাগান হতে পারে—এটা আগে কল্পনা করিনি। সিলেট-শ্রীমঙ্গলের মতোই এখানে টি ট্যুরিজমের সম্ভাবনা রয়েছে।’
তেঁতুলিয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের উদ্যোক্তারা মনে করেন, বাগানগুলোতে আধুনিক রিসোর্ট গড়ে উঠলে পর্যটকদের সমাগম আরও বাড়বে।
প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির পর্যটন বিভাগের প্রধান ড. এ আর খান বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলো পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত মনোরম। যদি বিশেষ রিসোর্ট ও বাংলো গড়ে তোলা যায়, তাহলে পর্যটন শিল্পে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা।’
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু জানান, প্রশাসন পর্যটন বিকাশে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, ‘এখানে চা বাগানে পাতা তোলা থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণ সব কিছু পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। আমরা চা বাগান মালিকদের টি ট্যুরিজমে উৎসাহিত করতে কাজ করব।’
শতবর্ষী স্থাপনা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, রক্স মিউজিয়াম, অসংখ্য নদী আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য—সব মিলিয়ে পঞ্চগড় এখন উত্তরবঙ্গের পর্যটনের নতুন কেন্দ্র। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দিগন্তজোড়া চা বাগানের সবুজ হাতছানি।
এআরএস